ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি মিশন। প্রথম ম্যাচের ব্যাটিং ব্যর্থতা ভাসিয়ে নিয়েছিল বৃষ্টি। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে ক্যারিবীয়দের রান উৎসবের দিনে হারও দেখতে হয়েছে সফরকারীদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরেছে ৩৫ রানে। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিক দল এগিয়ে গেলো ১-০ ব্যবধানে।
উইন্ডসর পার্কে স্বাগতিক দল যেখানে রান উৎসব করেছে। সেখানে বাংলাদেশের ইনিংসে টি-টোয়েন্টি মেজাজের ব্যাটিংটা ছিল অনুপস্থিত। দিশাহীন ব্যাটিংয়ে ১৯৪ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই হোঁচট খেয়ে বসে সফরকারী দল। পাওয়ার প্লের মাঝে হারায় ৩ উইকেট।
প্রথম ওভারে চার মেরে ভালো সূচনার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন লিটন দাস। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে যেতেই দেখা মিললো পুরনো বাংলাদেশের। পর পর দুই বলে ফিরেছেন লিটন-এনামুল। লিটন ওবেড ম্যাককয়ের প্রথম বলটি উঠিয়ে মারতে গেলেও তাতে ছিল না সেই পাওয়ার। ফলাফল লিটন তালুবন্দি হন ৫ রানে। পরের বলে এনামুল শরীর থেকে বাইরের ফুলার লেংথের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ৩ রানে। তাতে দুই ম্যাচেই ব্যর্থ হলেন দীর্ঘদিন পর ফেরা এই ওপেনার।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ তৃতীয় ওভারে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে চাপ দূর করার উপায় খুঁজছিলেন। কিন্তু নিজের ভুল শট সিলেকশনে বিপদ আরও বাড়িয়ে গেছেন তিনি। স্মিথের বলে ১১ রানে তালুবন্দি হয়েছেন ম্যাককয়ের।
তার পর অবশ্য আফিফ হোসেন সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় থেকেছেন। দুজনের ৫৫ রানের জুটি ইতিবাচক বার্তাও দিচ্ছিল। কিন্তু এমন সময়ে ভুল করে বসেন আফিফ। শেফার্ডের ওভারে দ্রুত গতিতে রান তোলার তাড়নাতে ক্যাচ তুলে দেন শর্ট ফাইন লেগে। ২৭ বলে এই ব্যাটারকে থামতে হয়েছে ৩৪ রানে। তার ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ১টি ছয়।
জুটি ভাঙার পর প্রয়োজনের সময় প্রথম ম্যাচের মতো ঝলক দেখাতে পারেননি সোহান। ১৩ বল খেলে ৭ রানে ফিরেছেন। সাকিব একপ্রান্ত আগলে থাকলেও তার ব্যাটিংয়ে প্রথম ম্যাচের মতো সেই ঝলকটা ছিল না। শেষ দিকে কিছু শটস খেললেও বরং হারের ব্যবধান কমানোতেই তা অবদান রেখেছে। মোসাদ্দেক কিছুক্ষণের জন্য তার সঙ্গী হলেও জয়ের সম্ভাবনা তাতে ছিল না। শেষ ওভারে মোসাদ্দেককে ১৫ রানে গ্লাভসবন্দি করিয়েছেন শেফার্ড। তার বিদায়ের পর বাংলাদেশ ৬ উইকেটে করেছে ১৫৮ রান। দশম হাফসেঞ্চুরি পাওয়া সাকিব ৫২ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। তাতে ছিল ৫টি চার ও ৩টি ছয়ের মার।
ক্যারিবীয়দের হয়ে ৩৭ রানে দুটি উইকেট নেন ওবেড ম্যাককয়। ২৮ রানে দুটি নেন রোমারিও শেফার্ডও। একটি করে উইকেট নিয়েছেন আকিল হোসেন ও ওডেন স্মিথ।
টস জিতে শুরুতে ৫ উইকেটে ১৯৩ রানের বড় সংগ্রহ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ব্রেন্ডন কিং ৪৩ বলে ৫৭ রানে বড় সংগ্রহের ভিতটা গড়ে দিয়েছেন। পরে ২৮ বলে অপরাজিত ৬১ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছেন রোভম্যান পাওয়েল।
দুই পরিবর্তনের দিনে পেসার তাসকিন আহমেদ তার ফেরাটা স্মরণীয় করতে পারেননি। শুরুর ওভারটিই ছিল ব্যয়বহুল। দিয়েছেন ১৪ রান। মেহেদী-সাকিবের ঘূর্ণিতে দ্রুত কাইল মায়ার্স-শামরাহ ব্রুকসের উইকেট হারালেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ চড়াও হওয়া শুরু করে তার পর। ব্রেন্ডন কিং-নিকোলাস পুরান জুটি বড় সংগ্রহের ভিতটা গড়ে দিয়েছে। তাদের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ১২ ওভারে পূরণ হয় দলের শতরান। ৭৪ রানের দুর্দান্ত জুটিটি ভাঙে অধিনায়ক পুরানের বিদায়ে। এই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক নিজের প্রথম ওভারেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ককে (৩৪)।
পুরানের বিদায়ের পর অবশ্য হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন কিং। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলকেও টেনে আনেন অনেক দূর। শরিফুলের বলে এই ব্যাটার ফিরলে শেষ দিকে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন রোভম্যান পাওয়েল। তার বিস্ফোরক ব্যাটিংয়েই স্কোরবোর্ড ফুলেফুঁপে উঠে। অবশ্য সেজন্য তাসকিনের দায়ও কম নয়।
শেষ দিকের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে পাওয়েল একাই দলকে টেনে নিয়েছেন। ২০ বলে তুলে নেন ফিফটি। শেষ ওভারে রোমারিও শেফার্ডকে (৩) শরিফুল তালুবন্দি করালেও পাওয়েল-স্মিথ ঠিকই রানের চাকা সচল রেখে ৫ উইকেটে জমা করেছেন ১৯৩ রান।
পাওয়েল ২৮ বলে ৬১ রানে অপরাজিত ছিলেন। তার ইনিংসে ছিল ২টি চার ও ৬টি ছয়। ম্যাচসেরাও তিনি।
বল হাতে বাজে দিন কাটানো বাংরাদেশের হয়ে বেশি ব্যয়বহুল ছিলেন তাসকিন। ৩ ওভারে ৪৬ রান দিয়েছেন। শরিফুলও ৪ ওভারে ৪০ রান দিয়েছেন, নিয়েছেন দুটি উইকেট। শেখ মেহেদী ৪ ওভারে ৩১ রানে নেন ১টি উইকেট।
সাকিব শুরুতে রান চেক দিতে পারলেও পরে সেটি ধরে রাখতে পারেননি। ৩৮ রানের বিনিময়ে পেয়েছেন একটি উইকেট। তুলনায় সফল বলা চলে মোসাদ্দেককে। ১ ওভারে এক মেডেনে নেন একটি উইকেট।