কোম্পানীগঞ্জে মডেল মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তরেই সাড়ে ৩ বছর!

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জমি জটিলতায় সাড়ে তিন বছর ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের। সাড়ে তিন বছর আগে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও এখনো মূল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়নি।

তবে এত দীর্ঘ সময়েও জমি জটিলতা শেষ না হওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে মডেল মসজিদ নির্মাণের চিন্তা করে উপজেলা প্রশাসন বিকল্প জমিতে নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুন মাসে উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের উত্তর বুড়দেও গ্রামে সরকারি জমিতে শুরু হয় প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। চলতি বছরের জুনে এ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার চার বছর পূর্ণ হতে চললেও কাজের অগ্রগতি বলতে প্রথমল যা ছিল তাই। অর্থাৎ প্রকল্পটির ২০ শতাংশ কাজ হয়েছে মাত্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নিজস্ব ভূমিতে মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সম্ভাব্যতা যাচাই ও মাটি পরীক্ষা করা হয়। স্বাধীন কনস্ট্রাকশন নামে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এই মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ পায়।

২০১৯ সালের ৩ জুন স্বাধীন কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশও দেওয়া হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ৮২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। কাজের অংশ হিসেবে মাটি ভরাট ও লোড টেস্ট করে পাইল ড্রাইভ করা হয়।

এমন সময়ে প্রকল্পের জমি নিজের দাবি করে জেলা সহকারী জজ কোম্পানীগঞ্জ আদালতে মামলা করেন উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নের বুড়িডহর গ্রামের জনৈক সামছুন নেহার। সরকারি জমি নিজের বলে দাবি করায় আদালত ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ওই জমিতে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্টদের। আদালতের নির্দেশের পরে বন্ধ হয়ে যায় ওই প্রকল্পের নির্মাণকাজ। পরবর্তীতে কয়েক দফা শুনানি শেষে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর আদালত মসজিদের পক্ষে রায় দেন। রায় পেয়ে নির্মাণকাজ শুরু হতে না হতেই গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাদী উচ্চ আদালতে রিট করেন। ফলে আবার স্থগিত করা হয় নির্মাণকাজ।

সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন মামলাটি পরিচালনা করছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই স্থানে নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে না। তবে উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে আলোচনার মাধ্যমে অন্য স্থানে মসজিদটি নির্মাণ করা যেতে পারে।

কোম্পানীগঞ্জ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্বাধীন কনস্ট্রাকশনের সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, প্রকল্পটির কাজ ২০১৯ সালের জুনে মাসে শুরু হয়। এসময় প্রকল্প এলাকার মাটি ভরাট শেষে লোড টেস্ট করে পাইল ড্রাইভ করা হয়। এরপর প্রকল্পের জমির মালিকানা নিয়ে সরকার ও ব্যক্তির জটিলতা তৈরি হয়। এ জটিলতায় কাজের আর অগ্রগতি হয়নি। প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার প্রায় চার বছর হতে চললেও এত দীর্ঘ সময়েও মামলার সুরাহা না হওয়ায় হতাশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয়রা।

কোম্পানীগঞ্জ ইমাম সমিতির সভাপতি হাফেজ মাওলানা মাসুম আহমদ বলেন, সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা সহ সারা দেশের ৫০ টি মডেল মসজিদ আজ (১৬ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় কোম্পানীগঞ্জের মডেল মসজিদটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে কয়েক বছর ধরে। প্রকল্পটির সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় নির্মাণ কাজ দ্রুত হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি।

উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সুপারভাইজার আব্দুল আজিজ বলেন, ‘প্রকল্পটি নিয়ে আদালতে দায়ের করা স্বত্ব মামলায় নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকলেও আদালতে মামলাটি নিয়ে আমরা লড়ে যাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, ‘আমি এ উপজেলায় দায়িত্ব নেওয়ার আগেই মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছিল, কিন্তু জমি নিয়ে জটিলতা থাকায় কয়েক বছরেও কাজ শেষ না হওয়া দুঃখজনক। তবে বর্তমানে উপজেলা পরিষদের সকল সদস্যদের নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে মডেল মসজিদ নির্মাণের চিন্তা করে উপজেলা প্রশাসন বিকল্প জমিতে নির্মাণের পরিকল্পনা করছি। ইতিমধ্যেই একটি সরকারি জমি দেখা হয়েছে। আগামী মাসিক মিটিং সর্বসম্মতিক্রমে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে খুব দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’