- আড়াই মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি প্রধান আসামিসহ দুই জন
- আসামিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ভীতি দেখাচ্ছে
সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ১৩ বছর বয়সী তরুণী মেয়ের ধর্ষণের বিচার চেয়ে থানায় মামলা করে উল্টো আতঙ্কে দিন কাটছে এক পরিবারের। আসামীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায়
আসামিদের পরিবার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি হওয়ায় ভিকটিমের পরিবারকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।
তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় গত ৭ সেপ্টেম্বর কোম্পানীগঞ্জ থানায় উপজেলার কালিবাড়ী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম পুত্র ইসনুস মিয়া (২১), একই গ্রামের সুফান মিয়ার পুত্র ফরিদ মিয়া (২৫) ও নুর ইসলামের পুত্র রায়হান মিয়া (২১) সহ তিন জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেন ভিকটিমের মা। থানা পুলিশ মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর এক ও উনচল্লিশ তৎসহ পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের ৮ এর এক ও দুই ধারায় রুজু করে (মামলা নং জিআর ১৭৯/২০২২ইং)।
মামলায় অভিযুক্ত আসামি ফরিদ মিয়া (২৫)কে থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজাতে প্রেরণ করেছে। তবে মামলা গ্রহণের প্রায় আড়াই মাস হয়ে গেলেও প্রধান আসামি ইউনুস মিয়া (২১) সহ দুই জন আসামি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এর আগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ী গ্রামের স্বামীপরিত্যক্তা এক নারীর মাদ্রাসায় পড়ুয়া মেয়ে (১৩)কে একাধিকবার ধর্ষণের ঘটনায় স্থানীয় সালিশ মীমাংসার মাধ্যমে তরুণীর বিয়ের চেষ্টা করে ভুক্তভোগী পরিবার। তবে সফল হয়নি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৩ বছর বয়সী ভিকটিমকে মামলার আসামিরা বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটে বিরক্ত করে আসছিল। গত ১৫ মে আসামীগণ ভিকটিমকে রাস্তা থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় কালিবাড়ী গ্রামের নুর ইসলামের পুত্র ৩নং আসামি রায়হান মিয়ার পাহারায় ও সহযোগিতায় একই গ্রামের সিরাজ মিয়ার পুত্র ১ নং আসামী ইউনুস মিয়া ভিকটিমকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের দৃশ্য স্মার্ট মোবাইল ফোনে ধারণ করে একই গ্রামের সুফান মিয়ার পুত্র ২নং আসামি ফরিদ মিয়া।
তারপর থেকে বিভিন্ন সময় ও তারিখে ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও অনলাইন জগতে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকিতে একাধিকবার ধর্ষণ করে ভিকটিমকে। এ ঘটনা কাউকে প্রকাশ না করতে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলা হয় যদি কাউকে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করে আসামীগণ তাহলে ভিকটিমের মা শিল্পী বেগম ও মেয়েকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়।
সবশেষ গত ৯ জুলাই রাতে ধান ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ভিকটিমকে ধর্ষণ করে ১নং আসামী ইউনুস মিয়া (২১)। আসামি ইউনুসের ধর্ষণের ফলে ভিকটিম গর্ভবতী হয়ে যায়। ধর্ষণের শিকার তরুণী ভয়ে এসব ঘটনা পরিবারের কাউকে না জানালেও ভিকটিমের শারীরিক অবস্থা দেখে গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারে ভিকটিমের মা। একপর্যায়ে পুরো ঘটনা যেনে ভিকটিমের মা ছুটে যান ১নং আসামি ইউনুস মিয়ার বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও প্রভাবশালী নেতা সিরাজুল ইসলামের কাছে। ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে কোন সমাধান না পেয়ে মেয়েকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের ওসিসি বিভাগে ভর্তি করেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান ভিকটিম সাড়ে তিন মাসের গর্ভবতী।
ভিকটিমের মা জানান, ‘আমার মেয়েকে ১নং আসামি একাধিকবার ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ঘটনাটি মোবাইল ফোনে ভিডিও করে অনলাইনে ভাইরাল করে দেওয়ার আসামিদের হুমকিতে এ ঘটনাটি আমার মেয়ে ভয়ে কাউকে জানায়নি। আমি যখন ঘটনাটি বুঝতে পারি সালিশ মীমাংসার মাধ্যমে মেয়ের বিয়ের চেষ্টা করি। কিন্তু আসামিদের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ার আমার মেয়ের ইজ্জতের বিচার পাইনি। তাদের ভয়ে মামলা করতেও সাহস না পেয়ে মানবাধিকার কর্মীদের সহযোগিতায় মামলা দায়ের করি। মামলা করার পর থেকে আসামিদের পরিবারের লোকজন আমার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকিধামকি দিয়ে আসছে। তাদের ভয়ে অবুঝ দুই মেয়েকে নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে থানায় একটি জিডি করতে গেলে ওসি তদন্ত জিডি রাখেন নি বলে অভিযোগ করেন ভিকটিমের মা। পরে তিনি
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গোপেশ দাস জানান, ‘আইনিভাবে আমি মামলার তদন্ত করছি এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
আসামিপক্ষ ভিকটিমের পরিবারকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মামলা করার কিছুদিন পরেই ভিকটিমের মা ১নং আসামির পিতা সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন মামলা শেষ করার জন্য। তাদের ব্যবহারে মনে হয়েছিল তারা নিজেরাই মীমাংসা করে আমার কাছে এসেছিল। বাদীপক্ষ ও আসামিপক্ষের এত ভালো সম্পর্ক থাকার পরেও হুমকি কথা আসার কথা না। পরপরও বিষয়টি আমি দেখবো।’
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, কালিবাড়ী গ্রামের ধর্ষণের ঘটনায় আদালতের নির্দেশে তিন জনের নামের একটি মামলা রেকর্ড করে আসামিদের গ্রেপ্তার ও তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যেই এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকী দুই পলাতক আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য থানা পুলিশ কাজ করছে।
আসামিদের পরিবারের পক্ষ থেকে ভিকটিম পরিবারকে হুমকির ভয়ে আতঙ্কে থাকার বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, ১নং আসামি ইউনুসের পিতা আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম খুব চালাক মানুষ হওয়াতে নিজ সন্তানকে মামলা থেকে বাঁচাতে ১নং আসামিকে লুকিয়ে রেখে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। তবে আমরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আসামিদের আটক করতে। আসামিরা মোবাইল ফোন ব্যবহার না করায় তাদের অবস্থা সনাক্ত করতে সময় লাগছে।
হুমকির বিষয়ে জিডি না নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, হুমকি দেওয়ার কোন স্বাক্ষী বা প্রমাণ না থাকায় এটি নেওয়া হয়নি। স্বাক্ষী প্রমাণ থাকলে জিডি নেওয়া হবে।