কোম্পানীগঞ্জে কুকুরের কামড়ে আহত ৬, ভ্যাক্সিন নেই

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল গ্রামে পাগলা কুকুরের কামড়ে ৬ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত রোগীরা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা পেলেও সুচিকিৎসাসহ ভ্যাক্সিন পান নি।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সকালে তেলিখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি কুকুর পুরো গ্রামে অন্তত ৬ জন মানুষ ও ১টি গরুকে কামড় দেয়।

পরে এলাকাবাসী আহতদের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও সুচিকিৎসা ও কুকুরের কামড়ের ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়নি। এতে আহতরাসহ স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান কুকুরের কামড়ের ভ্যাক্সিন সিলেট সদর হাসপাতালে ছাড়া উপজেলা হাসপাতাল গুলো নেই। তাই আহদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

আহতরা হলেন তেলিখাল গ্রামের বাবুল মিয়া (৩৭), তেরা মিয়া (৪৩), আব্দুল কাদির (৫৫), শুকুরন নেছা (৬০), শাহনুর মিয়া (৪০), শাব্বির আহমদ (৬৫)।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়-কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে। বিশেষ করে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে অনেক পাগলা কুকুর রয়েছে।

তেলিখালের টং দোকানদার আহত বাবুল মিয়া বলেন, সকালে আমি স্কুলের পাশে আমার দোকান খুলতে গেলে হঠাৎ একটি পাগলা কুকুর আমার হাতে কামড় দিয়ে ধরে রাখে। অনেক চেষ্টা করে আরো দুইজনের সহযোগিতায় ছাড়ায়। পরে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই চিকিৎসা নিতে। সেখানে গিয়ে কোন চিকিৎসা পাইনি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জানায় তাদের কাছে কোন ট্রিটমেন্ট নেই, সিলেটে গিয়ে ভ্যাক্সিন দেওয়ার জন্য। পরবর্তীতে আমি স্থানীয় একটি ফার্মেসীতে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছি এবং একটি ভ্যাক্সিন দিয়েছি ৫০০ টাকা খরচ করে। আমি টং দোকান দিয়ে দিনে ২০০/৩০০ টাকা রুজি করে কোন রকম আমার সংসার চালাই। অভাবের সংসারে কিভাবে আমি ৫ টা ভ্যাক্সিন টাকা দিয়ে দেবো খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি। আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারি চিকিৎসা জরুরি।

কুকুরের কামড়ে আহত তেলিখালের বাসিন্দা শাহ নুর ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, একটি পাগলা কুকুরের কামড়ে ৬ জন আহত হলে সবাইকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান, তাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো ভ্যাক্সিন নেই। সবাই দরিদ্র মানুষ হওয়ায় আমি নিজের পকেট থেকে গাড়ি ভাড়া দিয়ে সবাইকে নিয়ে সিলেট শহরে গিয়ে ভ্যাক্সিনের ১ম ডোজ দেওয়া হয়। গরীব ও হত দরিদ্ররা কিভাবে বাকি ডোজগুলো শহরে গিয়ে দেবে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সেবাটি পেলে গরীব মানুষগুলো উপকৃত হতো।

তেলিখাল ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাব্বির আহমদও কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছেন। তিনি বলেন- কুকুরের আক্রমণে আমিসহ আমাদের গ্রামের ৬ জন আহত হয়েছেন ও একটি গরু আহত হয়েছে৷ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেলে কোন ভ্যাক্সিন সেখানে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ফার্মেসী থেকে টাকা দিয়ে ক্রয় করে ভ্যাক্সিন দিতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাকি আহতরা যারা তারা সবাই সিলেট শহরে গিয়ে মেডিকেল থেকে ফ্রি ভ্যাক্সিন দিয়েছেন। তারা নিতান্তই গরীব মানুষ দিন আনে দিন খায়, তারা টাকা দিয়ে ভ্যাক্সিন দেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। কোম্পানীগঞ্জ থেকে সিলেট শহরে গিয়ে ভ্যাক্সিন দিতে হলে গাড়ি ভাড়ার খরচ বহন করার মতো সাধ্যও কারো নেই। তাই সরকারি খরচে কুকুরের কামড়ের চিকিৎসা কোম্পানীগঞ্জ হাসপাতালে দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবী জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার কামরুজ্জামান রাসেল জানান, প্রতিবছর এই সময়ে কুকুর পাগল হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী যে সকল এলাকায় বেশি আক্রমণ হয় সেই এলাকায় ভ্যাক্সিন সাপ্লাই দিয়ে থাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে ফ্রি পাওয়া যায়। কোম্পানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এই ভ্যাক্সিন নেই, সিলেট সদর হাসপাতালে গিয়ে এই ভ্যাক্সিন ফ্রি দিতে পারবেন। এই ভ্যাক্সিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আনারও সুযোগ কম। তারপর আমি চেষ্টা করছি।