এবারের এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশের হারে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। এ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। গতবছরের তুলনায় এবার সিলেটে পাসের হার কমেছে ১৮ শতাংশ। তবে পাসের হার কমলেও সিলেটে এবার জিপিএ-৫ বেড়েছে ২৩৭১টি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষার আগে ভয়াবহ বন্যা, মানবিকের অধিক শিক্ষার্থী আর গত বছরের চাইতে এবার বেশি বিয়ষে পরীক্ষা হওয়ায় পাসের হার কমেছে।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে সিলেট শিক্ষাবোর্ড মিলনায়তনে এই ফলাফল ঘোষণা করেন শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল। এসময় বোর্ডের সচিব কবির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন চন্দ্র পাল বলেন, এবার পরীক্ষার আগে সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা ছিল। বন্যায় অনেক পরীক্ষার্থী বই, খাতা ও নোট হারিয়েছে হারিয়েছে। প্রস্তুতি নিতে পারেনি। বন্যার পর বই দেওয়া হলেও নোট বই দেয়া যায়নি। বন্যার কারণে পরীক্ষাও পিছিয়েছে। এ কারণেই পাসের হার কমেছে।
তিনি বলেন, এছাড়া গত বছর গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা ছিল না। কেবল তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। এবার গণিত ও ইংরেজি পরীক্ষা হয়েছে। ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে। এবার ইংরেজিতে পাসের হার ৯২.৩৩ শতাংশ ও গণিতে ৮৯.৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী অধিক হওয়ায়ও পাসের হার কমেছে জানিয়ে অরুন চন্দ্র পাল বলেন, দেশের অন্যান্য বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী বেশি থাকে। কিন্তু সিলেটে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী যেখানে ২৩ হাজার ৩১৮ জন সেখানে মানবিক বিখাগের শিক্ষার্থী ৮৪ হাজার ২৭৩ জন। পাসের হারেও মানবিক বিভাগ অনেক পিছিয়ে। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯৩.৫৭ শতাংশ, অপরদিকে মানবিকে পাসের হার ৭৩.৮০ শতাংশ।
এই ফলাফলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারের ফলাফলে আমরা খুশি। আমরা উন্নতি করছি।
বন্যায় পাসের হার কমলেও কীভাবে জিপিএ-৫ বাড়লো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গ্রামের প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা। আর জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে শহরের শিক্ষার্থীরা। বন্যায় ক্ষতি তাদের তুলনামূলক কম হয়েছে।
শিক্ষাবোর্ড সূতদ্রে জানা যায়, চলতি বছর সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৯০ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে ৯০ হাজার ৯৪৮ জন পাস করেছে।
সিলেট বোর্ডে ৪৯ হাজার ৮৭ জন ছেলে ও ৬৬ হাজার ৩০৪ জন মেয়ে পরীক্ষার্থী পাস করেছে। ছেলে ও মেয়েদের পাসের হার যথাক্রমে ৭৮ দশমিক ৭১ শতাংশ ও ৭৮ দশমিক ৯ শতাংশ। এবারে ৩ হাজার ২৫৪ জন ছেলে ও ৪ হাজার ৩১১ জন মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, সিলেট শিক্ষাবোর্ডের অধীন ৯৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ১৫০টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শূন্য। আগের বছরের চেয়ে এবারে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা ২ হাজার ৭৩১ জন বেড়েছে।
এবার সিলেট বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এই বিভাগে ২৩ হাজার ৩১৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৩ হাজার ২৩০ জন পাস করেছে। এদের মধ্যে ৬ হাজার ৮৯৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
মানবিক বিভাগে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৮৯ জন। এই বিভাগে ৮৪ হাজার ২৭৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাসকরেছে ৮৩ হাজার ৩১৫।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই বিভাগে ৮ হাজার ৮৯৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৭ হাজার ৭২৮ জন। ২৮২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এদিকে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের অধীন চার জেলার মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে সিলেট জেলার শিক্ষার্থীরা। এই জেলায় পাসের হার ৮১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এছাড়া সুনামগঞ্জে ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ, হবিগঞ্জে ৭৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ ও মৌলভীবাজারে ৭৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ।