অভিযোগের ৫ মাসেও মিলেনি প্রতিকার

কুলাউড়ায় বালু উত্তোলন ও পরিবহনে চেয়ারম্যানের বাধা

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মনু নদীর বালুমহালের কটারকোনা ঘাট থেকে বালু উত্তোলন ও পরিবহনে বাধা প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখস ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে রাস্তায় খুঁটি পুতে বালু পরিবহন বন্ধ করে দেন। উত্তোলনকৃত বালু তার ছেলেদের (কর্মীদের) দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন বলে জানান ইজারাদাররা। তাতে রাজি না হওয়ায় তিনি বালুর ঘাটও বন্ধ করে দেন।

এ ব্যাপারে গত ১ জুন ইজারাদার মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক এবং কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তবে অভিযোগ করার ৫ মাস পার হলেও এখনও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি। যার ফলে ঘাটে উত্তোলিত কয়েক লক্ষ টাকার বালু পরিবহন করতে না পারায় সরকারের বড় অংকের রাজস্ব হারানোর শঙ্কা রয়েছে।

জানা যায়, জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির গত ২৭ মার্চের সভায় মনু নদীর বালুমহাল ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা রাজস্বে কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের আমানীপুর গ্রামের মো. ময়না মিয়াকে ১৪২৯ বাংলা সনের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়। এরপর ২৪ এপ্রিল মহালের দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ইজারাদার মহালটির সুখনবী, দাউদপুর, পাইকপাড়া, রণচাপ, জালালপুর, মাথাবপুর, কটারকোনা, বারইগাঁও, কাউকাপন এবং উপরিভাগ মৌজা থেকে বালু উত্তোলন করবেন।

তবে কটারকোনা মৌজার ৭০৫ ও ১৫৯৫ নং দাগ দুটি মনু ব্রিজের নিকটবর্তী হওয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কটারকোনার জেএল নম্বর ১২৫ এবং দাগ নম্বর ৪৯/৫২৯ ও ১৬৮ থেকে ২৬ দশমিক ২৬ একর জায়গা ইজারাদারকে দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ইজারাদার সেই বুঝিয়ে দেওয়া দখলকৃত স্থান থেকে বালু উত্তোলন ও পরিবহন করতে গেলে একটি মহল তাতে বাধা প্রদান করে।

বালুমহালের ইজারাদার মো. ময়না মিয়া গত ১ জুন বালু উত্তোলন ও পরিবহনে বাধার ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর গত ১০ আগস্ট কুলাউড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পৃথক একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান।

অভিযোগে ইজারাদার মো. ময়না মিয়া জানান, বালু উত্তোলন ও পরিবহন করতে গেলে একটি মহল দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাধা প্রদান করে। এমনকি বালু উত্তোলনের ঘাট বন্ধ করে দেয়। সংঘর্ষ এড়াতে তিনি ইউএনও এবং জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হন। কিন্তু কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় তিনি আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সরেজমিনে কটারকোনা বালুমহাল ঘাটে গেলে নদী থেকে উত্তোলিত কয়েক লক্ষ টাকার উত্তোলিত বালু পরিবহন করতে না পারায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। বর্তমানে এই ঘাট থেকে বালু উত্তোলনও বন্ধ রয়েছে।

ঘাটে কথা হয় বালু উত্তোলন কাজের শ্রমিকদের সাথে। তারা জানান, বালু উত্তোলনের কাজ বন্ধ থাকায় ২৫-৩০ জন শ্রমিক বেকার দিন কাটাচ্ছেন। রাস্তা ভাঙার অজুহাতে স্থানীয় হাজীপুর ইউনিয়নের কতিপয় লোক বালু উত্তোলন ও পরিবহনে বাধা প্রদান করছে।

শ্রমিকরা আরও জানান, বিগত প্রায় ১৮-২০ বছর এই ঘাট দিয়ে বালু উত্তোলন ও পরিবহন করা হলেও কেউ বাধা প্রদান করেনি। মূলত বিগত ইজারাদারের ইন্ধনে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন এই বাধা প্রদান করছেন। বিষয়টি নিয়ে ইজারাদারের লোকজন চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন। কিন্তু চেয়ারম্যান রাস্তার অজুহাত দেখিয়ে এই ঘাট তার সমর্থকদের দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

ঠিকাদারের অন্যতম সহযোগী কিবরিয়া হোসেন খোকন বলেন, চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখস ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে রাস্তায় খুঁটি পুতে বালু পরিবহন বন্ধ করে দেন। উত্তোলনকৃত বালু তার ছেলেদের (কর্মীদের) দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তাতে রাজি না হওয়ায় তিনি বালুর ঘাটও বন্ধ করে দেন। বালু পরিবহনে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা নিজ খরচে তা মেরামত করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কিন্তু তিনি তাতেও রাজি নন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান রুমেল জানান, বালুমহাল সরকারের, রাস্তাও সরকারের। বালু উত্তোলন ও পরিবহন করতে না পারলে ঘাট ইজারা দেওয়ার কোনো মানে হয় না। এছাড়া ইজারাদার যখন রাস্তা মেরামত করে দেবেন বলেছেন, তখন বালু পরিবহন করতে দেওয়া উচিত। কেননা বিগত দিনেও এই রাস্তা দিয়ে বালু পরিবহন করা হয়েছে।

হাজিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখসকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি ব্যস্ত আছেন জানিয়ে বলেন, রাতে নিরিবিলি সময়ে কথা বলবো।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, এই মুহূর্তে বিষয়টি কোন অবস্থায় আছে তা খোঁজ না নিয়ে ঠিক বলতে পারবো না। তবে ইজারাদার যদি অভিযোগ দিয়ে থাকেন, তাহলে কিছু একটা ব্যবস্থা নিশ্চয় নেওয়া হয়েছে। তারপরও না নেওয়া হয়ে থাকলে উনি যোগাযোগ করুক, আমরা ব্যবস্থা নেবো।