কুলাউড়ায় কৃষিতে সফল কামরুল হতে চান দেশসেরা

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রাজনীতির মাঠের সফল নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ স ম কামরুল ইসলাম সফল কৃষিতেও। মিশ্র মাছ চাষ, ফল, সবজি এবং ডেইরি ফার্ম- সকল ক্ষেত্রেও পাচ্ছেন ব্যাপক সফলতা। এতে করে এলাকার অনেক যুবকের বেকারত্ব ঘোচাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন তিনি।

পারিবারিক কারণেই ছাত্র থাকাবস্থায় কৃষির প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল অনেক। পিতা প্রয়াত সাংসদ আব্দুল জব্বার ছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সভাপতি ও একজন সফল কৃষক। উপজেলা আওয়ামী লীগের আজীবন সাধারণ সম্পাদক (১৯৬৪-১৯৯২) আব্দুল জব্বার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিশাল কৃষি খামার তিনি নিজে দেখাশোনা ও তদারকি করতেন তিনি। সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও আরও অনেক পদবির অধিকারী হয়েও সময়-সুযোগ পেলেই কৃষিকাজে নেমে পড়তেন আব্দুল জব্বার।

আ স ম কামরুল ইসলাম ২০০৬ সাল থেকে বাড়ির পাশে পৈত্রিক প্রায় ১৬ বিঘা জমি নিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন ‘আয়েশা এগ্রো অ্যান্ড ডেইরি’ নামে একটি সমন্বিত খামার বাড়ি। পাশাপাশি আরও ১৫ বিঘা জমিতে আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে বিভিন্ন দুর্লভ ও উন্নত জাতের ধান চাষ করেছেন। তাঁর কৃষি খামারে রয়েছে একটি গরুর খামার এবং গাভী ও গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প।

প্রায় সাতটি পুকুর দিয়ে গড়ে তুলেছেন মৎস্য খামার। পুকুরের চারপাশে রয়েছে দেশি ও ভিয়েতনামি নারিকেল, সব জাতের কলা, লেবু, থাই পেয়ারা, বাউকুল, আপেল, কুল বড়ই, থাই পেঁপে, হাড়িভাঙ্গা আম, আলী বারি ২, ৩, ৪ আম, দার্জিলিং কমলা ও মাল্টাসহ নানা জাতের ফল-ফলাদির গাছ।

গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন সব ধরণের শাক-সবজির বাগান আছে তাঁর। যেখানে শিম, আলু, লাউ, শসা, পুঁইশাকের বাম্পার ফলন হয় তার হাতের ছোঁয়ায়।

বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন আ স ম কামরুল ইসলাম। উন্নত টমেটো, বেগুন, ব্রুকলি, লেটুস, কেপসিকাম, মিষ্টি কুমড়া, সরিষা, মরিচ, করোলা, বরবটি, ভেন্ডিসহ সকল প্রকার তরকারির বাম্পার ফলন হয়ে থাকে প্রতিবছর।
এছাড়া উন্নত জাতের ধানের মধ্যে আছে চিনিগুড়া, কালিজিরা, ডায়বেটিক ধান, কালো ধান, কালো চাল, চিকনসাইল, গাজী ২৮, গাজী ২৯ সহ বিভিন্ন জাতের ধান।

আ স ম কামরুল ইসলাম বলেন, আব্বা আমাদেরকে বলতেন নিজের কাজে কোনো লজ্জা নেই। কোনো কাজকেই ছোট করে দেখা ঠিক নয়। কাজ জানতে হবে, নইলে অন্যকে দিয়ে সঠিকভাবে কাজ করাতে পারবে না। আমার বাবা প্রায়ই বলতেন- একসময় তেল, কেরসিন আর নুন ছাড়া কৃষেকের বাড়িতে সবকিছুই উৎপাদিত হতো। পিতার নীতি ও আদর্শকে লালন করে পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাজনীতর পাশাপাশি কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের অন্যতম আগ্রধিকার প্রকল্প ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি উৎসাহিত হই।

তিনি জানান, তাঁর খামারে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং তিনি নিজেও প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা কাজ করেন। এতে করে তিনি আনন্দ ও গৌরববোধ করেন। আগামীতে আরও বড় পরিসরে ব্যাপক আকারে বাণিজ্যিকভাবে তার অর্গানিক সবজি, মাছ, ফল বাজারজাতকরণের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন এবং সেখানে গ্রীণহাউস ও বিভিন্ন আধুনিক কৃষি খামার পরিদর্শন করেছেন। ভবিষ্যতে তাঁর খামার বাড়িতে গ্রীণহাউস প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত ও আধুনিক কৃষির পরিকল্পনা রয়েছে, যার মাধ্যমে সারা বছরব্যাপী শাক-সবজি উৎপাদন করা সম্ভব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মোমেন বলেন, আ স ম কামরুল ইসলাম একজন সফল চাষি। কৃষি বিভাগ সার্বিকভাবে তাঁর কৃষিকাজে সহায়তা করে থাকে। তাঁর উৎপাদিত সবজি ও ফল বিষমুক্ত। এভাবে সকল মানুষকে কৃষিকাজে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানাই।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু মাসুদ বলেন, আমি এই উপজেলায় যোগদানের পর আ স ম কামরুল ইসলামের মাছের খামার সম্পর্কে জেনেছি। শিগগির তাঁর খামার পরিদর্শন করবো। প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও থাকবে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে।

পেশায় কৃষক কামরুল পিতার মতোই কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত এবং খুবই সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচুর ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ বিতরণ ও রোপণ করেছেন। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিবছর সবধরণের গাছ রোপণ করেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের পরিত্যক্ত বাসভবনে মাটি ভরাট করে সীমানা প্রাচীর তৈরি করে বিভিন্ন ফলদ ও ঔষধি গাছের বাগান করেছেন তিনি।

সাবেক সফল উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যান ও বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসম কামরুল ইসলাম ২০১৬-১৭-১৮ তিনবার জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ২০১৮ সালে সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষিতে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দেশসেরা হতে চান তিনি।

তিনি বেকার যুবকদের উদ্দেশে বলেন, কেউ চাকরির আশায় অপেক্ষায় না থেকে যেন ছোট পরিসরে হলেও কৃষিতে মনোযোগী হয়ে খামার তৈরি করেন। এ খাতে সঠিক দিকনির্দেশনা মেনে পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই।