কুলাউড়া হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোচনা সভা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন, শীতবস্ত্র বিতরণ, সেলাই মেশিন বিতরণ ও হতদরিদ্রদের নিয়ে পিঠা উৎসব করেছে মানবিক টিম সিলেট।
মঙ্গলবার (০৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে এসব আয়োজন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কুলাউড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সুশীল সেন গুপ্ত।
মানবিক টিম সিলেট এর সমন্বয়ক সফি আহমদ (পিপিএম) এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বেওয়ারিশ সেবা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শওকত হোসেন পিপিএম। বিশেষ এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবক মইনুল ইসলাম শামীম সহ বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে মৌলভাবাজারের এই উপজেলা পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়। পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের কুলাউড়া থানায় প্রথম আগমন ঘটে ৭ই মে। মৌলভীবাজার থেকে কুলাউড়া প্রবেশ পথে কালুয়া ব্রিজের কাছে গতিরোধ করতে দিয়ে সেদিন শহীদ হন বীর সৈনিক মোজাহিদ সদস্য জয়চণ্ডী ইউনিয়নের মো. আকরাম ওরফে আছকির মিয়া ও হাবীব উদ্দিন।
কুলাউড়া থানার সবচেয়ে বড় ও সর্বশেষ অপারেশন পুরা ভোরের শেষ দিকে গাজীপুর মুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এতে নেতৃত্ব দেন এম এ মোমিত আসুক। সাগরনাল চা বাগানে প্রথম এসে অবস্থান নেন তারা। এই স্থানে মিলিত হন ধর্মনগর থেকে আগত কর্ণেল হর দয়াল সিংহের নেতৃত্বে ভারতীয় সেনা বাহিনী ৬৭ রামপুর রেজিমেন্টের বিরাট একটি দল। তারাও বাগানে অবস্থান নেন। ৩০শে নভেম্বর কাকুরা চা বাগানে অবস্থানকারী ৭৫ রাজাকার ও পাঁচজন পাকিস্তানি সৈন্য ধরা পড়ে। ১লা ডিসেম্বর ককুরা চা বাগান থেকে গাজীপুর চা বাগান এলাকার দিকে মিত্র বাহিনী অগ্রসর হলে পাক সেনাদের সঙ্গে পাল্টা গুলি বর্ষণ চলতে থাকে। ২রা ডিসেম্বর রাতে যুদ্ধ হয়। ৩রা ডিসেম্বর ৪/৫ গোখরা রেজিমেন্ট কর্ণেল হারকিলের নেতৃত্বে একটি দল সাহায্যে এগিয়ে আসেন। রাতেও প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। তবুও গাজীপুর চা বাগান এলাকা দখল মুক্ত করা সম্ভব না হলে ৪ই ডিসেম্বর যুদ্ধের পরিকল্পনা বদলে ফেলা হয়। সে অনুযায়ী এম এ মোমিত আসুক ও মোহনলাল সোম রাত ১২টায় পেছন দিক থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শেষ দিকে লক্ষরপুর গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনী এ যুদ্ধে অংশ নেন। এই যুদ্ধে প্রায় ২৫০ জন পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রাণ হারায়।
৫ ডিসেম্বর গাজীপুর চা বাগান এলাকা মুক্ত হয়। এই দিনই সন্ধ্যার দিকে সম্মিলিত বাহিনী কুলাউড়ায় পৌঁছে। এ রাতেই সব পাকিস্তানি সৈন্য ব্রাহ্মনবাজারের দিকে সড়ক পথে কুলাউড়া ত্যাগ করে। এভাবেই ৬ই ডিসেম্বর কুলাউড়া শত্রুমুক্ত হয়। এই দিন থেকে কুলাউড়ায় লাল-সবুজের পতাকা উড়তে থাকে।
মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার আতাউর রহমান আতা জানান, ৭ই মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাত্র যুবকসহ পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা মুক্তিযোদ্ধা কৃষকসহ প্রায় ৪৫০ জনকে হত্যা করে।