সারাদেশে অব্যাহত লোডশেডিং, বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী নীতির জন্য দায়িদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার দাবিতে বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (০৬ আগস্ট) বিকাল ৫টায় ইমজা (ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আহ্বায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়।
এডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েবের পরিচালনায় শুরুতে কী নোট পেপার উপস্থাপন করেন জেলা সদস্য তামান্না আহমেদ।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য, জাসদ সিলেট জেলা শাখার সভাপতি লোকমান আহমেদ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম, সিপিবি সিলেট জেলা শাখার সভাপতি ফরহাদ হোসেন, তথ্যচিত্র নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক নিরঞ্জন দে যাদু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সিকান্দার আলী, তেল, গ্যাস,খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি সিলেট জেলা শাখার সদস্য সচিব এডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন, বাসদ সিলেট জেলা শাখার সমন্বয়ক আবু জাফর, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা শাখার সভাপতি সিরাজ আহমেদ, সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক সুশান্ত সিনহা, সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সকল আলোচকবৃন্দ কোন পূর্ব আলোচনা ও মতামত ছাড়াই ডিজেলের দাম ৪১%, অকটেন ও পেট্রোলের দাম ৫১% বৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান।
আলোচকবৃন্দ নির্ধারিত প্রসঙ্গে আলোচনায় বাসদ (মার্কসবাদী) উত্থাপিত দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। শিল্প, কৃষি, জনজীবন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত। একঘন্টার লোডশেডিং দেশের অনেক স্থানে নয়-দশ ঘন্টাতেও দাঁড়াচ্ছে।
বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কোন দরপত্র ও প্রয়োজনীয় সরকারী প্রক্রিয়া ছাড়াই একের পর এক বেসরকারী উচ্চমূল্যের ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলভিত্তিক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি করে। সরকারঘনিষ্ট সামিট, ওরিয়নের মতো ব্যবসায়ীক গ্রুপগুলোর সাথে এ চুক্তি করা হয়। যা বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।
তারা বলেন, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সবচেয়ে বিরূপ প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের কৃষিতে, ইতিমধ্যে ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি ৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্প -কল কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকার বিরূপ প্রভাব জনজীবনে ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার বাস্তব চিত্র করোনা সংকটকালে দৃশ্যমান হয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, প্রত্যেক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা হাসপাতাল, বেসরকারি হাসপাতাল সমূহে বিদ্যুৎবিপর্যয় হলে কেমন পরিস্থিতি হবে ভাবলে গা শিউরে ওঠে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। দেশে ছোট-বড় অনেক কোল্ড স্টোরেজ আছে যেখানে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংরক্ষণ করা হয়, বিদ্যুৎ বিপর্যয় হলে তা ব্যাহত হবে যার বিরূপ প্রভাব বাজারে পড়বে এবং আরও মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতি তৈরি হবে।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে রেন্টাল, কুইক রেন্টালসহ অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করার দাবি জানিয়ে জ্বালানি খাতে আমদানি নির্ভরতা দূর করে জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে স্থল ও সমুদ্র ভাগে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উত্তোলনের দাবি তুলে ধরেন।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, মেঘাপ্রকল্প সমাধান নয়, আমাদের নিজস্ব গ্যাস উত্তোলনের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্থাৎ জল বিদ্যুৎ, সৌর বিদ্যুৎ, বায়ূ বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিতে হবে।
মতবিনিময় সভা থেকে সরকারের জাতীয় স্বার্থ বিরোধী নীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে জনগণকে সে আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহবান জানানো হয়।