দুই লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনতে নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইভিএম কেনাসহ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭শ ১১ কেটি ৪৪ লাখ টাকা। তবে এ প্রকল্পে ইভিএম সংরক্ষণের জন্যে গুদামঘর, জনবল, গাড়ি ও প্রশিক্ষণসহ আরও বিভিন্ন খাতে ব্যয় সন্নিবেশিত রয়েছে।
সোমবার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত ইসির মুলতবি কমিশন সভায় এ প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পটিতে ভ্যাট ও ট্যাক্স ছাড়া প্রতি ইউনিট ইভিএমের খরচ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ভ্যাট ও ট্যাক্স যুক্ত করলে খরচ প্রতি ইউনিটে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা পড়বে। অবশ্য ডলারের মূল্য ও ভ্যাট-ট্যাক্সের হার এর তারতম্যে এর মূল্যও কমবেশি হতে পারে।
ইভিএম কেনা ছাড়াও একই প্রকল্পের আওতায় নির্বাচন কমিশনের দশটি আঞ্চলিক অঞ্চলে ১০টি ওয়্যারহাউজ (গুদামঘর) স্থাপন, ইভিএম পরিবহনসহ দাফতরিক কাজে ব্যবহারে প্রতিটি উপজেলা নির্বাচন অফিসের অনুকূলে একটি করেসহ মোট ৫৩৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান, চারটি পাজেরো জিপ, ১ হাজার ৩০৫ জন জনবল নিয়োগ এবং সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে পুরো প্রকল্পের আকার দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭১১ কেটি ৪৪ লাখ টাকা।
এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম কেনার জন্য কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস করেছিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সেবার প্রতি ইভিএমের পেছনে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ খরচ হয়েছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির ফলে ইভিএমপ্রতি ১ লাখ টাকা থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো খরচ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নতুন এ প্রকল্পে পড়তে ইউনিট ইভিএমেন খরচ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর সাথে সরকারি হারে ভ্যাট ট্যাক্স যুক্ত হবে বলে তিনি জানান। এই দামে ২ লাখ ইভিএম কেনা হবে।
ইসির প্রস্তাবিত মূল্য অনুযায়ী ২ লাখ ইভিএম কেনার জন্য ৬ হাজার ১শ কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে। ভ্যাট-ট্যাক্স যুক্ত হলে তা সাত হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
একটি ইভিএমের তিনটি অংশ আছে। এগুলো হলো কন্ট্রোল ইউনিট, ব্যালট ইউনিট ও ডিসপ্লে ইউনিট। ভোটারের নিজেদের পরিচয় নিশ্চিত করতে আঙুলের ছাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিসপ্লেতে ওই ভোটারের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য চলে আসে। ব্যাটারির মাধ্যমে ইভিএম চলবে। চার্জ থাকবে ৪৮ ঘণ্টা। ইভিএমের সঙ্গে বাইরের কোনও ইন্টারনেট বা এ ধরনের কোনও সংযোগ থাকবে না। ফলে এটি হ্যাক করার সুযোগ নেই।
সোমবার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নিজেদের সপ্তম সভায় ‘নির্বাচনি ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএম এর ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) অনুমোদন দেয়। পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তারা প্রকল্পের আকার ঘোষণা করেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সিইসি এ সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
২০১১ সালের পর থেকে বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। তবে তখন ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার সামর্থ্য ছিল নুরুল হুদা কমিশনের।
এর আগে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন বাংলাদেশে প্রথম ইভিএম ব্যবহার করে। ওই ইভিএম তৈরি করেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বুয়েটের তৈরি ইভিএমে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছিল। ওই ইভিএমে বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা ছিল না। ‘ভিভিপিএটি’ (ভোট দেয়ার নিশ্চিতের রশিদ) সুবিধাও ছিল না। বর্তমানের ইভিএমেও ‘ভিভিপিএটি’ সুবিধা নাই।
সোমবারের বৈঠক শেষে ইসি মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বর্তমানে আমাদের কাছে যে ইভিএম আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ভোট করা সম্ভব। তাই ১৫০টি আসনে নির্বাচন করতে হলে নতুন করে ইভিএম কিনতে হবে। এ জন্য ইসি সচিবালয় নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব কমিশন সভায় তুলেছিল। আমরা এটার অনুমোদন দিয়েছি। এখন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। এর আগে একটা কাজ আছে। সেটা হলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটা সভা করতে হবে। তারপর সেটা প্ল্যানিং কমিশনে পাঠানো হবে। একনেক এটা চূড়ান্ত অনুমোদন করবে কী করবে না, এটা তাদের বিষয়।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৯৩ হাজারের মতো ইভিএম রাখা হয়েছে। নির্বাচনের সময় সেখান থেকে যন্ত্রগুলো পাঠানো হয়। আর বিএমটিএফে সংরক্ষিত আছে প্রায় ৫৫ হাজার যন্ত্র। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম ইসির কাছে রয়েছে।