নির্বাচনের আগে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়া ‘কিংস পার্টি’ খ্যাত তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) আর বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)’র একজন প্রার্থীও জিততে পারেন নি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগে নিবন্ধন পাওয়া এসব রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে আগের কথার সাথে ভোটের ফলের কোনো মিলই পাওয়া যায় নি। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, এসব দলের দু’একজন প্রার্থী ছাড়া বাকি সবার জামানাতও বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
কিংস পার্টিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত দল তৃণমূল বিএনপি। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপি গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন লাভ করে। নাজমুল হুদার মৃত্যুতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হন তাঁর মেয়ে অন্তরা হুদা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর দলের প্রথম সম্মেলনে চেয়ারম্যান করা হয় বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরীকে। যিনি বিএনপি থেকে বহিস্কার হয়ে বিকল্পধারায় যোগ দিয়েছিলেন। আর দলটির মহাসচিব করা হয়েছিলো আরেক বহিস্কৃত বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারকে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল হবার ঘোষণা দিয়ে সারাদেশের ১৩৫টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল দলটি। তবে নির্বাচনে আগে ও ভোটের দিন বেশ কয়েকজন প্রার্থী ভোট বর্জন করেন। যারা শেষ পর্যন্ত ভোটে ছিলেন তাদের বেশিরভাগেরই জামানত টেকে নি।
সিলেট-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দিতা করা তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী প্রথমে ঢিমেতালে শুরু করলেও ভোটের আগের শেষ তিনচারদিন খুব জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়েছেন। তার আসনের আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশর সমর্থনও পেয়েছিলেন। একটা সময় মনে হচ্ছিলো এই আসনের ভোটে তার আশেপাশেই থাকবেনা কেউ। তবে ভোটের ফলাফলে চুপসে যায় প্রত্যাশার বেলুন। নৌকার প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাথে প্রতিদ্বন্দিতায়ও আসতে পারেন নি তিনি। ৫৮ হাজার ১২৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন নাহিদ, আর সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে ১০ হাজার ৯৩৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন শমসের মুবিন চৌধুরী।
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার প্রতিদ্বন্দিতা করেন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে। নির্বাচনের আগে বিপুল ভোটে জয়ী হবার কথা বলা তৈমুরের জামানতও টেকে নি। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গাজী গোলাম দস্তগীর এক লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। আর তৈমূর আলম খন্দকার পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট।
প্রয়াত নাজমুল হুদার কণ্যা ও তৃণমূল বিএনপির নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা সেলিমা হুদা মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে লড়াই করেন । তিনি পেয়েছেন মাত্র ৬ হাজার ৩৩৭ ভোট। আর বিজয়ী প্রার্থী মহিউদ্দিন পেয়েছেন ৯৫ হাজার ৮৬০ ভোট।
বিএনপির আরেক বহিষ্কৃত নেতা ও ৯৬ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরের নেতৃত্বে গত ১০ আগস্ট নিবন্ধন পায় বাংলাদেশ জাতীয়বাদী আন্দোলন (বিএনএম)। এই দলটির নেতারাও কথার যুদ্ধে লঙ্কাজয় করেছিলেন নির্বাচনের আগে। ৫৬টি আসনে মনোনয়নও দিয়েছিলেন। তবে একজন প্রার্থীও বিজয়ী হয়ে আসতে পারেন নি।
বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর লড়েছেন ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী) সংসদীয় আসনে। এখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৩১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর (নোঙ্গর) ২২ হাজার ৪৬৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন।
অন্যদিকে চাঁদপুর-৪ আসনে প্রার্থী হয়ে জামানত হারিয়েছেন দলটির মহাসচিব ড. মুহাম্মদ শাহ্জাহান। আসনে ১১৮টি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে ৩৬ হাজার ৪৫৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সাংবাদিক শফিকুর রহমান। বিএনএম মহাসচির নোঙর প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৭৪ ভোট।
দলটির আরেক আলোচিত নেত্রী সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী পাবনা-২ আসনে অংশ নিয়ে পেয়েছেন মাত্র ৪ হাজার ৩৮২ ভোট।
চট্টগ্রাম-২ আসনে লড়েছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী। আওয়ামী লীগের খাদিজাতুল আনোয়ার সনির সাথে পাত্তাই পান নি এই নেতা। এক লাখ ৬৮৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। একতারা প্রতীকে সুপ্রীম পার্টির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী পেয়েছেন তিন হাজার ১৩৮ ভোট।