কিউইদের হারিয়ে লড়াইয়ে থাকল ইংলিশরা

আবারও ব্যাটিংয়ে জ্বলে উঠলেন গ্লেন ফিলিপস। কিন্তু এ যাত্রায় নিউজিল্যান্ডের ত্রাণকর্তা হতে পারেননি তিনি। এই ব্যাটারকে ৬২ রানে থামিয়ে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে ইংল্যান্ড। মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ক্রিকেটের জনকরা জিতেছে ২০ রানের ব্যবধানে।

ব্রিসবেনের গ্যাবায় প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৯ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড। রান তাড়ায় জয়ের স্বপ্ন দেখছিল ব্ল্যাকক্যাপসরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থামে ৬ উইকেটে ১৫৯ করে। দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ পাঁচ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে প্রতিপক্ষকে হারের হতাশা উপহার দিয়েছে ক্রিকেটে জনকরা।

ইংল্যান্ডের এই জয়ে দারুণ জমে উঠল প্রথম গ্রুপের খেলা। গ্রুপের ছয় দলেরই বাকি আছে একটি করে ম্যাচ। সমান ৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সেরা তিনে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। ৪ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে শ্রীলঙ্কা এবং পাঁচে থাকা আয়ারল্যান্ডের পয়েন্ট ৩।

টেবিলের তলানিতে থাকা আফগানিস্তানের ঝুলিতে জমা পড়েছে ২ পয়েন্ট। পয়েন্ট টেবিলই বলে দিচ্ছে যে এই গ্রুপ থেকে এক আফগানিস্তান বাদে সবারই সেমি খেলার সুযোগ আছে। কোন দুই দল যাবে সেরা চারে তা জানা যাবে প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচ-ডের পরই।

এদিন ব্রিসবেনে টস ভাগ্য জিতেন জস বাটলার। মাঠে নেমে অ্যালেক্স হেলসকে সঙ্গে নিয়ে শাসন করেন কিউই বোলারদের। দুই ওপেনার খেলে দেন অর্ধেকের বেশি ওভার। এই জুটি ভাঙতে প্রথম ১০ ওভারেই ৫ বোলারের শরণাপন্ন হন কেন উইলিয়ামসন। অবশেষে ১১তম ওভারে দলকে কাঙ্ক্ষিত ব্রেক থ্রু উপহার দেন মিচেল স্যান্টনার। ওভারের দ্বিতীয় বলে হেলসকে আউট করেন কিউই স্পিনার। সাজঘরে ফেরার ৪০ বলে ৭ চার এবং ১ ছক্কায় ৫২ রান করেন ইংলিশ ওপেনার। তখন তার দলের সংগ্রহ ছিল ৮১ রান। এক কথায় উদ্বোধনী জুটিতে সেরা শুরুই পেয়েছিল ক্রিকেটের জনকরা। কিন্তু বাটলার-হেলসের গড়ে দেওয়া মঞ্চে জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হয় বাকিরা।

উইকেটের একপ্রান্তে ব্যাট হাতে তাণ্ডব অব্যাহত রেখেছিলেন বাটলার। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন সতীর্থদের যাওয়া-আসার চিত্র। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে মাত্র ৫ রান করতে পারেন মঈন আলি। তাকে শিকার বানান ইশ সোধি। ব্যাটিংয়ে হাত খুলেছিলেন লিয়াম লিভিংস্টোন। তবে ২০ রান করতেই পথ হারান লুকি ফার্গুসনের বলে।

শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার মিশনে অল্পতেই থামেন হ্যারি ব্রুক (৭)। তাকে প্যাভিলিয়নে পাঠান টিম সাউদি। ইনিংসের ১৯তম ওভারে থামেন বাটলার। রানআউট হন ইংলিশ অধিনায়ক। তিনি ৪৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস সাজান ৭ চার ও ২ ছক্কায়। শেষ ওভারে বেন স্টোকসকে (৮) আউট করেন ফার্গুসন। সব মিলে ৬ উইকেটে ১৭৯ রানে থামে ইংল্যান্ডের ইনিংস।

এরপর বোলিংয়েও দলকে শুভসূচনা উপহার দেয় ইংলিশ বোলাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে প্রথম আঘাত হানেন ক্রিস ওকস। তিনি আউট করেন ৩ রান করা ডেভন কনওয়েকে। আরেক ওপেনার ফিন অ্যালেনকে (১৬) মাঠ ছাড়া করেন স্যাম কারান। তাতে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ব্ল্যাকক্যাপসদের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৪০ রান। তৃতীয় উইকেটে নিউজিল্যান্ডের হাল ধরেন উইলিয়ামসন ও গ্লেন ফিলিপস। এই যুগলের ৫৯ বলে ৯১ রানের জুটিতে ম্যাচে ফিরে কিউইরা।

১০ম ওভারে আদিল রশিদের বলে ক্যাচ তুলেছিলেন ফিলিপস। কিন্তু বল তালুবন্দী করতে পারেননি মঈন। ব্যক্তিগত ১৫ রানে জীবন পেয়ে বিধ্বংসী রূপে আবির্ভাব হন কিউই ব্যাটার। ৫০ স্পর্শ করেন ২৫ বলে। এর খানিকবাদে ইংলিশ শিবিরে প্রাণ ফেরান স্টোকস। বাটলার তাদের আগের ম্যাচগুলোতে বোলিংয়ে ওপেন করান স্টোকসকে দিয়ে। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে দলের সেরা অস্ত্রকে ইনিংসের ১৫তম ওভারে প্রথম ব্যবহার করেন বাটলার। কাজে দেয় তাদের এই পরিকল্পনা। পঞ্চম বলে উইলিয়ামসনকে আউট করেন স্টোকস। কিউই অধিনায়ক ৪০ বলে করেন ৪০ রান।

উইকেটে নেমেই প্রথম বলে চার হাঁকান জিমি নিশাম। চড়াও হয়েছিলেন মার্ক উডের বিপক্ষে। তবে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় ক্যাচ দেন ডিপ মিড-উইকেটে থাকা কারানকে। ৩ বল খেলা নিশামের ব্যাট থেকে আসে ৬ রান। ৩৬ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৬২ রান করা ফিলিপসকে আউট করেন কারান। তখনই কিউইদের জয়ের স্বপ্ন অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।