শুক্রবার থেকে বিশ্ব ইজতেমার মূল পর্ব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার থেকেই হাজার হাজার মুসল্লি গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন। শীত উপেক্ষা করে বুধবার দুপুরের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মানুষকে ইজতেমা ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় এসে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এসেছেন বিদেশিরাও।
তুরাগ নদীর তীরে প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছে। শেষ হয়েছে ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি। ময়দানে মুসল্লিদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা তুরাগ নদে ৫টি এবং বিআইডব্লিউটিএ ১টি ভাসমান পন্টুন সেতু নির্মাণ করেছে।
এছাড়া ১৬০ একর জমির ওপর নির্মিত সুবিশাল প্যান্ডেলের কাজ, খুঁটিতে নম্বর প্লেট, খিত্তা নম্বর, জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, মুকাব্বির মঞ্চ, বয়ান মঞ্চ, তাশকিল কামরা, বধির সাথীদের জন্য বিশেষ কামরা, পাহারা ও এস্তেকবালের (অভ্যর্থনা) জামাত তৈরি, হালকা নম্বর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। তবে চট স্বল্পতার কারণে এবার অধিকাংশ খিত্তার শামিয়ানা বিভিন্ন জেলার তাবলিগের সাথীরা নিজ নিজ দায়িত্বে টানিয়েছেন।
ইজতেমা ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বুধবার থেকে প্রায় ৬ হাজার পুলিশসহ র্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
নিরাপত্তা জোরদার করতে র্যাবের কমিউনিকেশন উইং, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ১৭টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়াও থাকছে মেটাল ডিটেক্টর, নাইটভিশন গগল্স, বাইনোকুলার, বোম্ব ডিসপোজাল টিম, অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিট, সোয়াত, ড্রোন ভিউ, হেলিকপ্টার-নৌ টহল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে র্যাবের ৯টি ও পুলিশের ১৪টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
বুধবার সন্ধ্যার আগেই ইজতেমা ময়দান প্রায় পূর্ণ হয়ে যায়। হালকা বৃষ্টির কারণে গত রাতে মুসল্লিদের সাময়িক অসুবিধা হলেও এখন তা কেটে গেছে। তাবলিগের ৬ মূলনীতির আলোকে ইজতেমার মূল প্যান্ডেল থেকে অনানুষ্ঠানিক বয়ানও চলছে। বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পরে বয়ান করেছেন তাবলিগের মুরব্বি মাওলানা আহমদ লাট।
ময়দানে প্রথম পর্বে খিত্তাভিত্তিক মুসল্লিদের অবস্থান
এ বছর প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যে সমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো-গাজীপুর-খিত্তা ১, টঙ্গী-২, ৩ ও ৪, ঢাকার মিরপুর-৫ ও ৬, সাভার-৭ ও ৮, মোহাম্মদপুর-৯, কেরানীগঞ্জ-১০ ও ১১, কাকরাইল-১২ থেকে ১৫ ও ১৮, ২০, ২১, যাত্রাবাড়ী-১৬ ও ২৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২২, নওগাঁ-২৩, নাটোর-২৪, টাঙ্গাইল-২৫, ঢাকার নবাবগঞ্জ-২৬, ধামরাই-২৭, সিরাজগঞ্জ-২৯, ঢাকার দোহার-৩০, রংপুর-৩১, নীলফামারী-৩২, জয়পুরহাট-৩৩, গাইবান্ধা-৩৪, বগুড়া-৩৫, লালমনিরহাট-৩৬, দিনাজপুর-৩৭, নারায়ণগঞ্জ-৩৮ ও ৩৯, নড়াইল-৪০, মুন্সীগঞ্জ-৪১, বরিশাল-৪২, ঝালকাঠি-৪৩, ভোলা-৪৪, নরসিংদী-৪৫, যশোর-৪৬, সাতক্ষীরা-৪৭, বাগেরহাট-৪৮, চুয়াডাঙ্গা-৪৯, মেহেরপুর-৫০, জামালপুর-৫১ ও ৫২, ময়মনসিংহ-৫৩ ও ৫৫, কুষ্টিয়া-৫৪, শেরপুর-৫৬, নেত্রকোনা-৫৭, কিশোরগঞ্জ-৫৮, গোপালগঞ্জ-৫৯, খাগড়াছড়ি-৬০, রাঙামাটি-৬১, ফরিদপুর-৬২, বান্দরবান-৬৩, কক্সবাজার-৬৪, পিরোজপুর-৬৫, হবিগঞ্জ-৬৬, সিলেট-৬৭, সুনামগঞ্জ-৬৮, ফেনী-৬৯, নোয়াখালী-৭০, লক্ষ্মীপুর-৭১, চাঁদপুর-৭২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৭৩, খুলনা-৭৪, পটুয়াখালী-৭৫, বরগুনা-৭৬, চট্টগ্রাম-৭৭ ও ৭৮, কুমিল্লা-৭৯। এছাড়া তুরাগ নদের পশ্চিম পাড়ের ময়দানে ঝিনাইদহ-৮০, মাগুড়া-৮১, কুড়িগ্রাম-৮২, ঠাকুরগাঁও-৮৩, পাবনা-৮৪, মানিকগঞ্জ-৮৫, মৌলভীবাজার-৮৬, পঞ্চগড়-৮৭, মাদারীপুর-৮৮, শরীয়তপুর-৮৯, রাজবাড়ি-৯০।
বধিরদের জন্য ৯১নং খিত্তা রাখা হয়েছে। এছাড়াও ১০১ থেকে ১০৫ পর্যন্ত ৫টি খিত্তা সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। বিদেশি মেহমানরা বরাবরের মতো এবারও ময়দানের উত্তর-পশ্চিম কোণে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নিয়েছেন।
জানা গেছে, শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি জোহরের নামাজের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। ৪ দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যোবায়ের পন্থীরা। দ্বিতীয় পর্বের নেতৃত্বে থাকছেন সাদপন্থীরা।