আগামী অর্থবছরে ফেরত আসতে পারে বিনা প্রশ্নে ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করা, বা অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার করার সুযোগ। ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন নতুন বাজেটে ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করে যে কেউ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পাবেন। যারা এই সুযোগ নেবেন- তাদেরকে সাধারণ ক্ষমাসহ এ সুযোগ দেওয়া হবে। এর ফলে অর্থের উৎস সম্পর্কে সরকারের কোনও সংস্থা প্রশ্নও করবে না। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
দুই বছর আগে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তেমন সাড়া না পাওয়ায় পরে এ সুযোগ বাতিল হয়। এরপরের বছর দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হলেও কেউ সেই সুযোগও নেননি।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ব্যক্তি করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার দিতে হয় ২৫ শতাংশ হারে, যা আগামী অর্থবছরে ৩০ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে এনবিআর। আর যদি সরকার ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়, তাহলে মাত্র অর্ধেক কর দিয়ে অঘোষিত টাকা সাদা করার সুযোগ পেতে পারেন এই অর্থের মালিকরা।
২০২১-২২ অর্থবছরে মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশ থেকে অঘোষিত অর্থ দেশে আনার সুযোগও দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই অর্থবছরে দেশের একজনও সরকারের দেওয়া এই সুযোগ নেয়নি। অবশ্য বর্তমান আয়কর আইনেও শর্তসাপেক্ষে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রয়েছে। তবে ঢালাওভাবে এই সুযোগ দেওয়া হয়নি।
বর্তমান আয়কর আইন অনুযায়ী, যেকোনও করদাতা সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কর দিয়ে এবং এরসঙ্গে ওই করের ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পান। তবে এর বাইরে প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে এলাকাভেদে নির্দিষ্ট আয়তনের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত কর পরিশোধ করেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আছে। তবে এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট যেকোনও সংস্থা চাইলে পরবর্তীকালে ওই টাকার উৎস স¤পর্কে প্রশ্ন করতে পারবে। তবে তাতে খুব একটা অর্থ সাদা হচ্ছে না বা মূলধারার অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে না।
অবশ্য অর্থনৈতিক অঞ্চল বা হাইটেক পার্কে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ এখনও রয়েছে। এই বিনিয়োগে অ্যামনেস্টি পান বিনিয়োগকারীরা।
‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়’, বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলে প্রকৃত করদাতারা নিরুৎসাহিত হয়। এমন সুযোগ থাকাও উচিত না। তিনি বলেন, প্রকৃত করদাতাদের ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হচ্ছে। আর যারা কর ফাঁকি দিচ্ছে, অথবা অবৈধ আয় করছে, তাদের যদি মাত্র ১৫ শতাংশ কর দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়- তাহলে সেটা ভালো করদাতাদের ওপর অন্যায্য সিদ্ধান্ত হবে। এমন সিদ্ধান্তে ভালো করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন বলেও মনে করেন তিনি।
এনবিআরের তথ্যে বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ১১ হাজার ৮৩৯ জন ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বৈধ করে। ওই অর্থবছরে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করে ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছিল এনবিআর। এর মধ্যে ৭ হাজার ৫৫ জন এনবিআরের অস্থায়ী বিধানের আওতায় ব্যাংকে জমা বা নগদ ১৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা বৈধ করেছেন। বাকি টাকা জমি, ফ্ল্যাট বা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে পুঁজিবাজার, আবাসন, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র ও নগদে টাকা জমার প্রায় সবগুলো খাতে বিনিয়োগে মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া, প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে এলাকাভেদে নির্দিষ্ট আয়তনের ওপর ভিত্তি করে করের হার নির্ধারণ করে জমি ও ফ্ল্যাট ক্রয়ে অপ্রকাশিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে এই সুযোগ সবচেয়ে বেশি কাজে লাগানো হয়েছে জমাকৃত অর্থের ক্ষেত্রে। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ওই সময়ে তাদের কালো টাকা সাদা করেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের প্রায় সবকটি সরকারই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু, তেমন উল্লেখযোগ্যভাবে সাড়া না পাওয়ায় এসব উদ্যোগের বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে।