মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ। নানা শঙ্কা ও আলোচনা ছিল এই বিশ্বকাপ নিয়ে। পশ্চিমা গণমাধ্যম শুরু থেকে ছিল এই বিশ্বকাপের সমালোচনায়। বিশ্বকাপ শুরুর পরও তাদের অবস্থান পরিবর্তন হয়নি। তবে খেলার মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং আয়োজকের আন্তরিকতায় সফল সমাপ্তির পথেই কাতার বিশ্বকাপ।
আজ রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় লুইসাল স্টেডিয়ামে শেষ অঙ্কে কাতার বিশ্বকাপ। যেখানে বিশ্বকাপ ট্রফির জন্য মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। সরাসরি খেলা দেখাবে বিটিভি, টি স্পোর্টস ও গাজী টিভি।
কাতার বিশ্বকাপকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছিল আর্জেন্টিনার সৌদির কাছে হার। যেই হারকে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঘটন হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়েছে। সৌদির কোচ ঐতিহাসিক জয়ের পর বলেছিলেন, ‘এই আর্জেন্টিনাই চ্যাম্পিয়ন হতে পারে।’ সেই মন্তব্য সত্যি হওয়ার শেষ পর্যায়ে। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মেসির আর্জেন্টিনা এখন ফাইনালে।
গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় ছিল আর্জেন্টিনা। মেসির লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্টের গুণে আর্জেন্টিনা এখন ফাইনালে। নিজে করেছেন পাচ গোল। এমবাপ্পের সঙ্গে যুগ্মভাবে রয়েছেন গোল্ডেন বুটের দৌড়ে। নিজে যেমন গোল করেছেন তেমনি গোল করিয়েছেনও। রদ্রিগো ডি পল, আলভারেজ, মার্টিনেজরাও যোগ্য সমর্থন দিচ্ছেন মেসিকে।
গোটা বিশ্ব জুড়েই প্রত্যাশা মেসির হাতেই যেন উঠে কাতার বিশ্বকাপের ট্রফি। বিশ্ব জুড়ে সমর্থন থাকলেও ফুটবলীয় শক্তিতে ফ্রান্স খানিকটা এগিয়ে অনেক বিশ্লেষকের দৃষ্টিতে। করিম বেনজামা, পগবা, কান্তেরা নেই ইনজুরির জন্য। তিন গুরুত্বপূর্ণ তারকা না থাকলেও পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ফ্রান্স দারুণ ফুটবল খেলেছে। বিশেষ করে তাদের বাজির ঘোড়া কিলিয়ান এমবাপ্পে। দুই বিশ্বকাপ খেলেই তার গোল সংখ্যা ৯। বয়স মাত্র ২৩। ফিটনেস ও এই ফর্ম থাকলে ফুটবল বিশ্বের অনেক রেকর্ডই হবে এই ফরাসি বালকের।
২০১৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্স অপরাজিত থাকলেও এই বিশ্বকাপে হারের তেতো স্বাদ নিতে হয়েছে দেশমের দলকে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে তিউনিশিয়ার বিপক্ষে দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে এই হার। সেই হার যে শুধু পরীক্ষার কারণেই সেটা দ্বিতীয় রাউন্ডে পোল্যান্ডকে দোর্দন্ড প্রতাপে হারিয়ে প্রমাণও করেছে। ফ্রান্সের পরের দুই প্রতিপক্ষ জটিলই ছিল।
কোয়ার্টারে একবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড আর সেমিতে এই বিশ্বকাপে আলোচিত নাম মরক্কো। দুই দলের বিরুদ্ধেই ৯০ মিনিটের মধ্যে জয় তুলে নিয়েছে দেশম। যেখানে স্ক্যালোনীর আর্জেন্টিনাকে কোয়ার্টারের বাধা পার হতে যেতে হয়েছে টাইব্রেকার পর্যন্ত। এই বিশ্বকাপের শুরু থেকে তিন হট ফেভারিটের মধ্যে ছিল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। নেইমারের ব্রাজিল কোয়ার্টারে বাদ পড়লেও বাকি দুই হট ফেভারিটই শেষ পর্যন্ত ফাইনালে উঠেছে।
২০১৮ বিশ্বকাপে একই গ্রুপে পড়েছিল ক্রোয়েশিয়া ও আর্জেন্টিনা। মেসির আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়া। রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রতিশোধ নিয়েছে মেসিরা কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বিপক্ষে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ডে থেমেছিল আর্জেন্টিনার যাত্রা। এবার সেই ফ্রান্স শিরোপা বাধা। ক্রোয়েশিয়ার মতো কি ফ্রান্সের বিরুদ্ধেও প্রতিশোধ না টানা দুই বিশ্বকাপে মেসিদের হারিয়ে ফরাসিদের তৃতীয় বিশ্বকাপ। শেষ পর্যন্ত কার হাতে উঠবে শিরোপা এজন্য আর অপেক্ষা করতে হবে কয়েক ঘন্টা।