সিলেটে কামাল হত্যার আরও দুই আসামি শান্তিগঞ্জে গ্রেপ্তার

সিলেটে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল হত্যাকাণ্ডের তিন দিনের মাথায় মামলার এজাহারনামীয় ৪ ও ৬ নম্বর আসামী মিশু (২৬) ও মনা (২৫) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ৯ নভেম্বর সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ থানায় অভিযান চালিয়ে তাদেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৯ সিলেটের একাধিক আভিযানিক দল এ অভিযান পরিচালনা করে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- এয়ারপোর্ট থানার বাদামবাগিচা এলাকার মাসুক মিয়ার ছেলে এজাহারনামীয় ৪ নং আসামী মিশু (২৬) এবং একই থানাধীন গুয়াইপাড়া, বড়বাজার এলাকার মৃত. নুর মিয়ার ছেলে মনা (২৫)।

পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে গ্রেফতারকৃতদের সিলেট এয়ারপোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

সিলেটে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল হত্যাকাণ্ডের দুই দিনের মাথায় মামলা দায়ের করা হয়। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নিহতের বড় ভাই মঈনুল ইসলাম বাদি হয়ে এসএমপির এয়ারপোর্ট থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

এতে আজিজুর রহমান সম্রাটসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ।

এদিকে আ ফ ম কামাল হত্যাকাণ্ডের দুই দিনের মাথায় মামলার এজাহার নামীয় ৫ নম্বর আসামী কুটি মিয়াকে নগরীর গোয়াইপাড়া থেকে গ্রেফতার করেছে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ। অন্যান্য আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় পুলিশের কর্মকর্তারা।

অপরদিকে, আ ফ ম কামাল হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের মিছিল থেকে নাশকতার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুরের ঘটনায় এপর্যন্ত ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে এ ঘটনায়ও এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। আটক চারজনকে ৫৪ ধারায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এর আগে গত রোববার রাত ৯টার দিকে সিলেট নগরের আম্বরখানা বড়বাজার এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক নেতা আ ফ ম কামাল।

ব্যবসায়ীক বিরোধে কামাল খুন হতে পারেন বলে শুরু থেকেই পুলিশের পক্ষ থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে। এমনকি একটি ফোনকলের সূত্র ধরেই সিলেট জেলা বিএনপি নেতা আ.ফ.ম কামাল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছে পুলিশ।

পুলিশের দাবি- ঘাতকদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদেরকে যেকোনো সময় গ্রেপ্তারও করা হবে।

ঘটনার দিনই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাজার আলী শেখ জানান, তাদের মধ্যে ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্বের কারণেই ঘটনাটি ঘটেছে। এই ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব নিয়ে গেল ১৯ তারিখও একটি মামলাও হয়েছে। যেখানে আসামি ছিলেন বিএনপি নেতা আ.ফ.ম কামাল। আজকেও (রোববার) তারা আ.ফ.ম কামালকে ফলো করছিল। ঘটনার ক্লু উদ্ধার করা হয়েছে। যেকোনো সময় তারা গ্রেপ্তার হতে পারে।

এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের প্রায় আধাঘন্টা আগে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি ফোনকল আসে। এতে অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয় যে, পূর্বের ওই মামলার আসামি আ.ফ.ম কামাল বিমানবন্দর সড়ক ধরে শহরের দিকে আসছেন। তারা আ.ফ.ম কামালকে ফলো করছে বলেও জানায় এবং গ্রেপ্তারের তাগিদ দেয়। এর কিছু সময় পরেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। এর সূত্র ধরে কারা তাকে ফলো করছিল তাদের পুলিশ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছে।

এর আগে গত ১৯ অক্টোবর ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন আজিজুর রহমান সম্রাট নামের একজন। এই মামলায় আ.ফ.ম কামাল ৪নং আসামি। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে এর আগে নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এছাড়া বাদি-বিবাদি প্রায় সবাই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অনুসারী। এই ঘটনার জের ধরেই আ.ফ.ম কামাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

এদিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই কামাল মারা যান জানিয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শামছুল ইসলাম বলেন, কামালের দেহে ২৫টি ছুরিকাঘাত করা হয়। তার বাঁ হাতে ১৬টি, বাম বগলের নিচে ২টি, বুকের বামপাশে ১টি ও বাম পায়ে ৬টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আ ফ কামাল খুনের ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয় পাঁচজন। এরমধ্যে আজিজুর রহমান সম্রাট, শাকিল ও রাজু নামের তিনজনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে এই সূত্র। এদের মধ্যে সম্রাট আগে ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন তবে বর্তমানে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে জানা গেছে।

মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, আ ফ ম কামাল রাজনীতির পাশাপাশি পাথর ব্যবসা এবং নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি তার ট্রাভেল এজেন্সি থেকে আজিজুর রহমান সম্রাটের আত্মীয়কে সৌদি আরবে পাঠানো নিয়ে দুজনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় সম্রাট গত ২১ অক্টোবর আ ফ ম কামালসহ ১০ জনের নামোল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এরই জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।