কানাইঘাটে যুবককে কুপিয়ে আহত, পিতা-পুত্র গ্রেপ্তার

গুরুতর আহত আব্দুল্লাহ (বামে), পুলিশের হাতে আটক হামলাকারী ইউসুফ (ডানে)

জমিজমা ও মামলা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে কানাইঘাটে মো. আব্দুল্লাহ (১৯) নামে এক যুবককে কুপিয়ে গুরুতর আহতের ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কানাইঘাট থানার অদূরে উপজেলা রোডের আব্দুল্লাহ আল-মুমিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে চাপনগর গ্রামের আব্দুল কাহিরের পুত্র ইউসুফ আহমদ ও তার পিতা আব্দুল কাহিরকে আটক করেছে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের পুত্র মো. আব্দুল্লাহ’র পরিবারের সাথে পাশাপাশি বাড়ির বাসিন্দা মৃত রশিদ আহমদের পুত্র সেলিম আহমদ গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে আব্দুল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর হামলার ঘটনায় পূর্বে সেলিম আহমদ গংদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলা দায়েরের পর গত ২১ আগস্ট মো. আব্দুল্লাহকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আটক করে মারধর ও প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে বড় অংকের মুক্তিপণ আদায়ের পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে অপহরণ ঘটনার সাথে জড়িত সেলিম আহমদ সহ ৬ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে আসামী করে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত নং-৫ সিলেটে সি.আর মামলা নং-২৮৪/২০২২ দায়ের করেন। আদালত দরখাস্ত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সিলেট পিবিআইকে নির্দেশ দেন। মামলাটির তদন্ত থাকা অবস্থায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সেলিম আহমদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন আব্দুল্লার পাকা বসত বাড়িতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়ে আব্দুল্লাহকে না পেয়ে তার মা কমলা বেগমকে মারধরসহ ঘরের মালামাল ভাংচুর সহ ক্ষতিসাধন করে হামলাকারীরা।

এ ঘটনায় আব্দুল্লার মা কমলা বেগম বাদী হয়ে সেলিম আহমদ, ইউসুফ আহমদ সহ ১০ জনকে আসামী করে কানাইঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়ে গত বৃহস্পতিবার মামলাটি রেকর্ড করে। মামলার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহার নামীয় আসামি মৃত রশিদ আহমদের পুত্র মাহবুব মুর্শেদ, এনাম উদ্দিন, মঞ্জুর আহমদকে গ্রেপ্তার করে।

এ তিন জনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের স্বজনরা আব্দুল্লাহকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মামলার কাজে আব্দুল্লাহ থানায় এসে কানাইঘাট বাজারে রিকশা দিয়ে ফেরার পথে চলন্ত রিকশায় পিছন দিক থেকে এজাহার মামলার আসামি ইউসুফ আহমদ ধারালো চাকু দিয়ে কাঁধের নিচে আঘাত করলে রক্তাক্ত অবস্থায় আব্দুল্লাহ প্রাণ বাঁচাতে দৌঁড়ে গিয়ে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় পড়ে যায়। এ সময় পথচারী সহ আশপাশের লোকজন হামলাকারী ইউসুফ আহমদকে আটক করে কিছুটা উত্তম-মধ্যম দিলে থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক তাকে আটক করে। এরপর অভিযান চালিয়ে ইউসুফ আহমদের পিতা আব্দুল কাহিরকে তার বাসা থেকে আটক করে পুলিশ।

এছাড়া আশংকাজনক অবস্থায় ওই যুবককে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে সেখান থেকে তাকে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুল্লাহর স্বজনরা জানিয়েছেন, অধিক রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার অবস্থা এখনও গুরুতর।

কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. তাজুল ইসলাম পিপিএম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আব্দুল্লাহকে কুপিয়ে আহতের ঘটনায় জড়িত ইউসুফ আহমদ ও তার পিতা আব্দুল কাহিরকে আটক করা হয়েছে এবং আহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আব্দুল্লাহর মা কমলা বেগম জানান, তার ৫ ছেলের মধ্যে বড় ৪ ছেলে প্রবাসে থাকায় তাকে ও তার ছোট ছেলে মো. আব্দুল্লাহকে বাড়িতে একা পেয়ে তাদের জমিজমা আত্মসাতের চেষ্টাসহ বিভিন্ন সময় হামলা করে। সর্বশেষ তারা আমার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। তিনি জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবী করেন।