কানাইঘাটে ভারতীয় নাগরিককে আটকে মুক্তিপণ দাবি!

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মাদারপুর গ্রামে এক ভারতীয় নাগরিককে আটক করে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করেছে চোরাকারবারীরা। এ ঘটনায় এলাকা জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

খবর পেয়ে কানাইঘাট থানা পুলিশ ভারতীয় নাগরিক ইকবাল উদ্দিন (২৫)-কে উদ্ধারে সাঁড়াসি অভিযান পরিচালনা করলেও এখনো তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। এমনকি ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ।

কানাইঘাট থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমেদ জানান, ভারতীয় এক নাগরিককে বাংলাদেশে এনে আটকের সংবাদ জানার পর কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। চোরাকারবারিদের অবস্থান প্রাথমিকভাবে জকিগঞ্জের কাজলশাহ এলাকায় জানার পর বিষয়টি জকিগঞ্জ থানা পুলিশ ও স্থানীয় বিজিবিকে অবহিত করেছি। জকিগঞ্জ থানা পুলিশও ভারতীয় নাগরিককে উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে।

কয়েকটি সূত্র জানায়, গত ৭ জুলাই (শুক্রবার) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার একদল চোরাকারবারী ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে আসাম রাজ্যের কাছাড় জেলার গুমড়া থানার জালালপুর (তারাপুর) গ্রামের কামাল উদ্দিনের পুত্র ইকবাল উদ্দিন (২৫)-কে কৌশলে কাড়াবাল্লা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এনে তাকে জোরপূর্বক ভাবে মাদারপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ লতু হাজীর পুত্র চোরাকারবারী নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে একটি ঘরে আটকে রাখে। একপর্যায়ে চোরকারবারী চক্রের সদস্যরা ভারতীয় নাগরিক ইকবাল উদ্দিনের নিকট ভারতীয় ১৭ লক্ষ রুপী মুক্তিপণ দাবী করে। ইকবাল উদ্দিন মুক্তিপণ দিতে অপারগতা জানালে অপহরণকারীরা তাকে রশি দিয়ে হাত-পা ও কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে লাঠি ও লোহার পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও ধারন করে ইকবাল উদ্দিনের মোবাইল থেকে তার পরিবারের নিকট পাঠায়। এমনকি চোরাকারবারীরা ইকবাল উদ্দিনের পরিবারের নিকট তার কান্নার আওয়াজ শুনিয়ে বলে তাদের দাবীকৃত ১৭ লক্ষ রুপি না দিলে ইকবালকে খুন করে ফেলবে।

এমন নির্যাতনের চিত্র ও ভিডিও পেয়ে বিষয়টি ইকবালের আত্মীয় গোয়াইঘাট উপজেলার জাফলং গ্রামের আব্দুস সোবহানের পুত্র রায়হান পারভেজ বিষয়টি স্থানীয় সীমান্তবর্তী এলাকার জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করেন। ঘটনা শুনে কাড়াবাল্লা পূর্ব গ্রামের মৃত মসকিন আলীর পুত্র সাবেক ইউপি সদস্য মাহতাব উদ্দিন আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে চোরকারবারী নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে ইকবাল উদ্দিনকে পাননি।

তবে আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন নাজিম উদ্দিনের বাড়ি থেকে একজনকে ধরে কয়েকজন অন্যত্র নিয়ে যেতে দেখেছেন। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ার কারনে সাবেক ইউপি সদস্য মাহতাব উদ্দিন ঘটনার সাথে জড়িত লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের দনা রতনেরগুল গ্রামের আব্দুর রহিমের পুত্র সাদ্দাম (৩২), মাদারপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ লতু হাজীর পুত্র নাজিম উদ্দিন (৩০), একই গ্রামের মৃত সবজান আলীর পুত্র মোস্তাক আহমদ (৩৫), মিকিরপাড়া গ্রামের মৃত সাজ্জাদুর রহমানের পুত্র এনাম উদ্দিন (২৮), বড়খেওড় গ্রামের মৃত আব্দুর রকিবের পুত্র সুলতান আহমদ (৩৬), দনা বালিচড়া গ্রামের মৃত খলিলুর রহমান খলুর পুত্র ফয়সল আহমদ (৩২) ও আইনুল হক (২৮), দনা বাঙ্গালীপাড়া গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের পুত্র রায়হান আহমদ (৩৫) ও রতনেরগুল গ্রামের মৃত কুতুব আলীর পুত্র রিয়াজ উদ্দিন (২৮)-সহ অজ্ঞাতানামা ৩/৪ জনের বিষয়টি কানাইঘাট থানায় ওসিকে জানান।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, ইকবাল উদ্দিনের বাড়ি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কাড়াবাল্লা ১৩৪১নং মেইন পিলার এর পূর্ব পাশে ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত। উল্লেখিত চোরাকারী চক্রের সদস্যরা ভারত হতে অবৈধ ভাবে প্রায়ই গরু, মহিষ, মাদক ইত্যাদি বাংলাদেশে আনে। এই সুবাদে ইকবাল উদ্দিনের সাথে তাদের পরিচয় হয়।

তবে অনেকে মনে করছেন চোরাচালানীর ব্যবসার টাকা আদান-প্রদান নিয়ে ভারতীয় নাগরিক ইকবাল উদ্দিনকে ভারত থেকে কৌশলে বাংলাদেশে এনে টাকা উদ্ধারে জন্য আটক করে রাখা হয়েছে।

কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভারতীয় নাগরিক আটকের কোন সংবাদ তিনি পাননি। এইমাত্র গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে জেনেছেন। বিষয়টি তিনি গুরুত্ব সহকারে থানা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করবেন।