সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বড়চতুল ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার নজরুল ইসলাম (৫৫) মারা গেছেন।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
নজরুল ইসলামের মৃত্যুর পর পরই থানা পুলিশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামী আম্বিয়া আহমদকে গ্রেপ্তার করেছে। অপর আসামীদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে ও জানিয়েছে পুলিশ।
নিহতের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, গত শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে গরু চুরির ঘটনা নিয়ে রতনপুর গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের পুত্র নজরুল ইসলাম ও তার মেয়ের জামাই সৌদি প্রবাসী ছয়ফুল্লা’র সাথে প্রতিবেশি মাহমুদ আলীর পরিবারের লোকজনের কথা কাটাকাটি নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর বিকেল ৩টার সময় মাহমুদ আলী ও তার ভাই হোসেন আহমদ এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা নজরুল ইসলামের ৫টি গরু ধরে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। গরু ফেরত আনাতে গেলে মাহমুদ আলীর লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নজরুল ও ছয়ফুল্লাহর উপর হামলা করে।
প্রাণ বাঁচাতে নজরুল ও ছয়ফুল্লাহ বাড়িতে গিয়ে দরজা লাগিয়ে আশ্রয় নিলেও ঘরের দরজা ভেঙে হামলাকারীরা ঘর থেকে তাদের টেনে-হিঁচড়ে বের করে এনে দেশীয় ধারালো অস্ত্র, মুগুর, লাঠি-সোটা দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটায় এবং কুপিয়ে জখম করে। এসময় নজরুল ইসলামের বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও ৩ মেয়ে হামলাকারীদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে আসলে তাদেরকেও মারধর করে। একপর্যায়ে আহত নজরুল ও ছয়ফুল্লাহকে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে অমানুষিকভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। পরে নজরুলের বাড়ির একটি আমগাছে তাদের বেঁধে রাখে।
নিহতের আত্মীয়-স্বজনদের অভিযোগ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক চৌধুরী ও ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সহ আরো কিছু গ্রাম্য মাতব্বর এর সামনে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নজরুল ইসলাম ও ছয়ফুল্লাহকে রাখা হলেও তারা কেউই বিচার করেননি।
গুরুতর আহত অবস্থায় নজরুল ইসলাম ও ছয়ফুল্লাহকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তাদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন নজরুল ইসলাম।
এ ঘটনায় নজরুল ইসলামের স্ত্রী কানাইঘাট থানায় ৫ জনকে আসামী করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এব্যাপারে কানাইঘাট থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, নজরুল ইসলাম ও ছয়ফুল্লাহ আহতের ঘটনায় থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়। যেহেতু আহত নজরুল ইসলাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন, এ কারণে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে এবং এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সকল আসামীকে গ্রেপ্তার করতে এলাকায় পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে গুরুতর আহত নজরুল ইসলাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর পর মঙ্গলবার কানাইঘাট সার্কেলের এএসপি অলক কান্তি শর্মা, থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার নিহতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের স্বান্তনা প্রদান করেন এবং এ ঘটনার সাথে জড়িত প্রত্যেককে চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন।