সিলেটের কানাইঘাটে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কর্তৃক জোরপূর্বক ভূমি দখল সহ নানা ধরনের হয়রানীর অভিযোগ এনে অপর এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকেল ৩টায় কানাইঘাট প্রেসক্লাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পৌরসভার নন্দিরাই গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার পুত্র মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান মো. সামছুদ্দিনের পক্ষে একই গ্রামের বাসিন্দা নন্দিরাই পূর্ব জামে মসজিদের মুতাওয়াল্লি মাসুদুল হক লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান শামছুদ্দিন বলেন, তার বড়ভাই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ছিলেন। তা থাকা সত্ত্বেও কোনদিন তিনি বা তার পরিবারের সদস্যরা মহান মুক্তিযোদ্ধা শব্দটির সম্মানহানি বা অপব্যবহার করেননি বা করতে চাননি। কিন্তু একই গ্রামের প্রতিবেশি মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রকিবের স্ত্রী জাহানারা বেগম মহান মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের শব্দটিকে পুঁজি করে ২০১৫ইং সালে নন্দিরাই মৌজার ১নং খতিয়ানের সাবেক ৫৯৫ এর হাল ৫৬২নং দাগে মোট ৫ শতক জমি ২৯৪২নং দলিলে বিভিন্ন শর্তে বন্দোবস্ত/লিজ গ্রহণ করেন। লিজ গ্রহণের পর জাহানারা বেগম তার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে নির্ধারিত ৫ শতক ভূমি সহ পার্শ্ববর্তী ৫৬১ নং দাগের সরকারি রাস্তা ও আমার মালিকানা ৫১০ দাগের প্রায় ২ শতক ভূমি জবর দখল করে পাকা বিল্ডিং নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এমনকি সুরমা নদীর আশপাশের সরকারি সরকারি জায়গা দখল করে তার পরিবারের সদস্যরা নিজেদের দাবী করে বাঁশ সহ গাছপালা রোপন করে রেখেছে। এলাকার লোকজন কেউ অত্র এরিয়া হয়ে সুরমা নদীর পানি ব্যবহার বা শুকনো মৌসুমে গোসল করতে পারছেন না তাদের অশ্লীল আচরণের কারনে।
লিখিত সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, জাহানারা বেগমকে যেসব শর্তে ৫ শতক ভূমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে, সেই বন্দোবস্ত দলিলের ১নং শর্তাবলীতে পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে কেবল মাত্র বসবাস ব্যতিতে অন্য কোন উদ্দেশ্যে বন্দোবস্ত ভূমি ব্যবহার করা যাবে না। শর্তাবলিতে উল্লেখ হয়েছে বন্দোবস্তের ভূমিতে নির্মিত ইমারত বা বিল্ডিং প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী যেকোন আরোপিত কর, পৌর কর পরিশোধ করতে হবে ইত্যাদি ১৯টি শর্তে ৫ শতক ভূমি জাহানারা বেগমকে সরকারের পক্ষ থেকে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। কিন্তু জাহানারা বেগম সেই সব শর্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বন্দোবস্তকৃত ভূমিসহ সরকারি যাতায়াতের রাস্তা ও আশপাশের সরকারি ভূমি দখল এমনকি আমার মালিকানা ভূমির ২ শতক জমি জবর দখল করে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে বিল্ডিং নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ নিয়ে নির্মাণ আইন মোতাবেক কানাইঘাট পৌর কর্তৃপক্ষ গৃহনির্মাণ কাজ বন্ধ করার প্রসঙ্গে একাধিক নোটিশ জারি করলেও তার কোন কর্ণপাত করছেন না জাহানারা বেগম পরিবারের সদস্যরা।
জাহানারা বেগম ও ছেলে-মেয়েদের যন্ত্রনায় অতিষ্ট হয়ে তাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী গত ২৮/১০/২০২১ইং তারিখ হতে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন। সর্বশেষ গত ০১/০১/২০২৩ইং তারিখে পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিলাল আহমদ গৃহ নির্মাণ বন্ধসহ সরকারি রাস্তার সীমানা নির্ধারণ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত দরখাস্ত করেন। সেই দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে ০১/০৩/২০২৩ইং তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি, কানাইঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল করিম, পৌর মেয়র লুৎফুর রহমান, থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম এর উপস্থিতিতে সরকারি সার্ভেয়ার দ্বারা মাপযোগ করে তাহার বন্দোবস্তের ভূমি খুঁটি পুঁতে বুঝিয়ে দেন। কিন্তু জাহানারা বেগম তার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পুঁতে দেয়া খুঁটি তুলে ফেলেন এবং দরখাস্তকারী কাউন্সিলর বিলাল আহমদসহ এলাকাবাসী, আমি ও আমার পরিবারের লোকজনকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে নানা ধরণের হামলা-মামলার হুমকি প্রদান করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাসুদুল হক বলেন, জাহানারা বেগম ও তার ছেলে-মেয়েরা বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার শব্দটিকে মূল হাতিয়ার বানিয়ে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সুযোগ নিয়ে এলাকায় যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। এলাকাবাসী তাদের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে তারা কাউকে তোয়াক্কা করছে না। তাদের হামলা-মামলার ভয়ে সব-সময় এলাকার লোকজন আতঙ্কিত থাকেন, কেউ তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে মামলা-হামলার ভয় দেখানো হয়।
বর্তমানে জাহানারা বেগমের চার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় সরকারি চাকরি করছে এবং তার এক মেয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরও পেয়েছে। এসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও সরকারি ভূমি দখল, সরকারি গাছপালা লুটপাটসহ আমার মালিকানা ভূমি তাদের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের শামছুদ্দিন জাহানারা বেগম ও তার পরিবার কর্তৃক জোরপূর্বক ভাবে দখল করে নেয়া ২ শতক ভূমি সহ সরকারি রাস্তাটি উদ্ধার করে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে সরকারের উচ্চমহল সহ সিলেটের এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সামছুদ্দিনের পরিবারের সদস্যসহ এলাকাবাসীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সেলিম উদ্দিন, রুহুল আমিন, ফখর উদ্দিন, আফজাল হোসেন রিজভী, সুবহান উদ্দিন, শহীদ উদ্দিন, আফতাব উদ্দিন মনটাই, সিরাজ উদ্দিন, কবির উদ্দিন, মনিরুজ্জামান, কামরুল ইসলাম, বাবুল আহমদ, সেবুল আহমদ, বুলবুল আহমদ, আবুল হাসান, শরীফ উদ্দিন, শিব্বির আহমদ, জুবের আহমদ, খসরুজ্জামান, এবাদুর রহমান, আতাউর রহমান, মুজিবুর রহমান প্রমুখ।