সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় বেপরোয়া চোরাকারবারিরা। যাদের মাধ্যমে ভারত থেকে অবৈধভাবে প্রতিদিন আসছে শত শত বস্তা চিনি, পাতার বিড়ি, চা-পাতা, কসমেটিক্স সামগ্রী, কাপড়, মোবাইল সেট, স্পোটর্স সামগ্রী, শুটকি ও বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য।
এমন চোরাচালানি বন্ধে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা ও চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির সভায় বিজিবি ও থানা পুলিশকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হলেও সেটি বক্তব্যের মাঝেই সীমাবদ্ধ। ফলে, কানাইঘাট উপজেলায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে চোরাকারবারিরা।
জানা গেছে, দেশে চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় কয়েক’শ চোরাকারবারী ভারতীয় চিনির ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। তারা প্রতিদিন কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী সুরইঘাট, লোভাছড়া, মুলাগুল বড়গ্রাম, মঙ্গলপুর, সোনারখেওড়, দনা, কাড়াবাল্লা, বড়বন্দ সহ আরো কয়েকটি স্পট দিয়ে হাজার হাজার বস্তা চিনি ভারত থেকে অবৈধ ভাবে দেশে এনে প্রকাশ্যে দিবালোকে লোভা-সুরমা নদীর নৌপথে ও বিভিন্ন সড়ক দিয়ে কানাইঘাটের হাট-বাজার সহ বাসা-বাড়িতে মজুদ করে রাখে। পরে এসব ভারতীয় চিনি দেশীয় বিভিন্ন চিনি কোম্পানীর বস্তা পরিবর্তন করে বড় বড় কন্টেইনার ও ট্রাকে করে পাঠিয়ে দেয় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিক্রি হচ্ছে সিলেটের কালিঘাটের বিভিন্ন আড়তেও। মাঝে মধ্যে বিজিবি, র্যাব, ডিবি পুলিশ ভারতীয় চিনির ছোট-বড় চালান আটক করলেও থেমে নেই চোরাকারবারীরা।
চিনির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে শক্তিশালী চোরাকারবারী চক্র, রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতাকর্মী, কিছু জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ীসহ আরো অনেকে জড়িয়ে পড়েছে এ ব্যবসার সাথে। উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে চিনি সহ উল্লেখিত মাদকদ্রব্য ও ভারতীয় পণ্যসামগ্রী দেশে এনে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে চোরাকারবারীরা।
স্থানীয় অনেকে জানিয়েছেন, কানাইঘাটের সীমান্ত এলাকায় ৪টি বিজিবি ক্যাম্প থাকলেও প্রতিদিন বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে হাজার হাজার বস্তা চিনি ভারত থেকে অবৈধভাবে নিয়ে আসা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে উল্লেখিত সীমান্তবর্তী এলাকা সহ আরো কয়েকটি স্পট দিয়ে ভারত থেকে এসব মালামাল অবাধে আনা হচ্ছে। এসব চিনি সহ মালামাল ভারত থেকে নিয়ে আসার পর প্রথম মজুদ করে রাখে। পরবর্তীতে চোরাকারবারীরা কানাইঘাট-চতুল-দরবস্ত সড়ক, সুরইঘাট-কানাইঘাট সড়ক, গাজী বোরহান উদ্দিন সড়ক, গাছবাড়ী-হরিপুর সড়ক, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের কানাইঘাট খেয়াঘাট-শাহবাগ সড়ক, মমতাজগঞ্জ থেকে সড়কের বাজার সড়ক, লোভারমুখ-চরিপাড়া-সাতবাঁক ইউপি সড়ক, সুরইঘাট-বাদশাবাজার-বড়বন্দ সড়ক দিয়ে পিকআপ, সিএনজি, লেগুনায় বহন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকে।
এছাড়াও সম্প্রতি সময়ে সুরমা ও লোভানদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চোরাকারাবারী চক্র ভারত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চোরাই চিনি সহ অন্যান্য পণ্য নৌকাযোগে লোভা নদী, আমরি নদী, নূনগাং হয়ে সুরমা নদীতে ঢুকে নদীপথে লোভারমুখ চড়িপাড়া, মমতাজগঞ্জ বাজারঘাট, দিঘীরপাড় খেয়াঘাট, কানাইঘাট বাজার, খেয়াঘাটে এনে নৌকা থেকে উঠিয়ে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি সহ দোকান ঘরে মজুদ করে রেখে বিক্রি করছে নির্বিঘ্নে। লোভা ও সুরমা নদীপথে শত শত ভারতীয় চিনি বস্তা নৌকা দিয়ে বোঝাই করে সিলেটের কালিঘাট সহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সচেতন মহল মনে করছেন, প্রকাশ্যে দিবালোকে সীমান্ত এলাকা দিয়ে যেভাবে বেপরোয়া চোরাচালানী হচ্ছে, এতে করে সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারত থেকে নিয়ে আসা এসব চোরাই পণ্যের আড়ালে অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য চোরাকারবারীরা নিয়ে আসতে পারে। তাই, চোরাচালান চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে সীমান্ত এলাকার চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি সহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আরো সক্রীয় হওয়ার আহ্বান জানান তারা।
উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা ও চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির প্রতিটি সভায় সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাচালান বেড়ে যাওয়ায় তা প্রতিরোধে বিজিবি ও থানা পুলিশকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা বার বার বলে থাকেন, তারা চোরাচালান প্রতিরোধে সক্রীয় ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। চিনির দাম দেশে বেড়ে যাওয়ায় ভারত থেকে চোরাই পথে চিনি আসা বেড়েছে। বিজিবি প্রতি মাসে চিনির বস্তা আটক সহ লক্ষ লক্ষ টাকা চোরাই পণ্য সামগ্রী আটক করে থাকে এবং নিয়মিত অনেক মামলাও করে থাকে বিজিবি। চোরাচালান প্রতিরোধে সচেতন মহলকে সহযোগিতা করার জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে বার বার অনুরোধ করা হয়ে থাকে।
সম্প্রতি কানাইঘাট সার্কেলের নবাগত এএসপি অলক কান্তি শর্ম্মা সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময়কালে বিশেষ করে চোরাচালান প্রতিরোধ এবং মাদকদ্রব্য নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতির কথা বলেন এবং চোরাচালান প্রতিরোধে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতাও চান।
কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম দস্তগীর আহমেদ বলেন, সীমান্ত এলাকার চোরাচালান প্রতিরোধ করা বিজিবির দায়িত্ব। তারপরও পুলিশ চোরাচালান প্রতিরোধে সক্রীয় রয়েছে।