কানাইঘাটে ‘আন্দু গাং’ জলমহালের লিজের শর্ত ভঙ্গ, তদন্তে এসিল্যান্ড

কানাইঘাটে মরা ‘আন্দু গাং’ জলমহালের লিজ দলীলের বিভিন্ন শর্ত ভঙ্গ করার দায়ে, জনস্বার্থে লিজটি বাতিলের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। লিজ বাতিল চেয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসকের বরাবরে সম্প্রতি দরখাস্ত দায়ের করা হলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিনের নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আহমেদ গত বৃহস্পতিবার মরা আন্দুগাং জলমহাল পরিদর্শনে যান।

এ সময় ভবানীগঞ্জ জুলাই খালের মুখে খাটির বাঁধ দিয়ে মাছের অবাধ বিচরণের প্রতিবন্ধকতা করায় এক সপ্তাহের মধ্যে খাটি বাঁধ নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেওয়ার জন্য জলমহালের ইজারাদার আজির উদ্দিনকে নির্দেশ প্রদান করেন এসিল্যান্ড ফয়সাল আহমেদ। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও জলমহালের ইজারাদারের সাথেও কথা বলেন তিনি।

জলমহালটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারী বিধি অনুযায়ী প্রতিবারই লিজ প্রদান করা হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর ৬ বছরের জন্য এ জলমহালের ৮০.৪৭ একর জায়গা লিজ প্রদান করা হয়। এতে নারাইনপুর নক্তিপাড়া মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির হয়ে ঐ লিজটি গ্রহণ করেন নারাইনপুর গ্রামের মৃত আতর আলীর পুত্র আজির উদ্দিন। এর প্রায় ৯মাস পর অর্থাৎ ২০২০ সালের ২০ জুলাই ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শাহাব উদ্দিন ও শরীফ আহমদ এ দুজন তহশিলদার মিলে আজির উদ্দিনকে জলমহালের দখলদেহী বুঝিয়ে দেন। তবে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন যেখানে সরকারী ভাবে মাত্র ৮০.৪৭ একর জায়গার লিজ প্রদান করা হয়েছে সেখানে এ দুজন তহশিলদার আজির উদ্দিনকে ১৭৩.৭ একর জায়গার দখলদেহী বুঝিয়ে দিয়েছেন।

এ নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে ক্ষোভ বিরাজ করে আসছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, এই আন্দু গাং’য়ের সাথে এ জনপদের মানুষের গভীর মিতালী রয়েছে। তাদের সুখ-দুখের নিত্যদিনের সাথী হয়ে মিশে আছে আন্দু গাংটি। তারপরও তারা এতদিন সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করেছেন। কিন্তু আজির উদ্দিন জল মহালটি লিজ নেয়ার পর থেকে একেরপর এক লিজ দলিলের শর্ত ভঙ্গ করে যাচ্ছেন।

গত ১৩ এপ্রিল আজির উদ্দিন জলমহালটি জয়ফৌদ কাজিরগ্রামের মৃত আজির উদ্দিনের পুত্র কয়ছর আহমদের কাছে সাবলিজ প্রদান করেন। সাবলিজ গ্রহণের পর থেকে কয়ছর আহমদ তার দলবল নিয়ে বেপরোয়াভাবে এই পুরো জলমহালটি তার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। এমনকি জুলাইখালে অবৈধভাবে বাশের গড় দিয়ে বাঁধ বসিয়ে জলজ প্রাণীসহ নৌকা চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। এতে এ জনপদের শত শত মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

অথচ লিজ দলিলের ৫নং শর্তে বলা হয়েছে- ‘লিজ গ্রহীতা ব্যবসা বাণিজ্য বা চলাচলের জন্য স্বাভাবিক নৌ চলাচলে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি করবেন না।’ এছাড়া ১০নং শর্তে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে- ‘লিজ গ্রহীতা এই জলমহাল কিংবা এর অংশ বিশেষ অন্য কাহাকেও সাবলিজ প্রদান করতে পারবেন না। সাবলিজ প্রদান করা হলে ইজারা সরাসরি বাতিল বলে গণ্য করা হবে এবং ইজারামূল্য ও জমাকৃত জামানত সরকার বরাবরে বাজেয়াপ্ত হবে। ঐ ইজারা গ্রহীতা সমিতি পরবর্তী ৩বছর কোন জলমহালের ইজারার জন্য বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। এছাড়াও ২৫নং শর্তে বলা হয়েছে বর্ষা মৌসুমে যখন ইজারাকৃত জলাশয় সংলগ্ন প্লাবন ভূমির সাথে একক জলাশয়ে রূপ নেয়, তখন ইজারাদারের মৎস্য আহরণ অধিকার, কেবল ইজারাকৃত জলাশয়ের সীমানার ভিতর সীমাবদ্ধ থাকবে।’- কিন্তু এসব শর্তের কোন শর্ত মানা হচ্ছে না।

এমন বাস্তবতায় গত ২৮ আগস্ট এলাকাবাসীর পক্ষের আনোয়ার হোসেন, দেলওয়ারা, শরীফ উদ্দিন, শরিফুল হক ও বাবুল আহমদ স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে দায়ের করা হয়েছে।

এ অভিযোগে সাব ইজারাদার কর্তৃক আন্দু গাং পাড়ের দরিদ্র মানুষের নানা নির্যাতন ও হয়রানীর কথা তুলে ধরা হয়েছে।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে কানাইঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আহমেদ সরেজমিনে গিয়েছেন। সেখানে ভবানীগঞ্জ জুলাই খালে নির্মিত বাঁশের গড় আগামী ১সপ্তাহের মধ্যে আজির উদ্দিন নিজ দায়িত্বে তা সরিয়ে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং বাকি বিষয় তদন্তাধীন আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।