পঞ্চগড়ে আহমদিয়া মুসলিম জামাতকে (কাদিয়ানি) নিষিদ্ধ ও তাদের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় পুলিশ ও মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় নয় পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে সংস্থাটির জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আরিফুর রহমান (২৭) নামের ওই যুবক শহরের মসজিদপাড়া এলাকার ফরমান আলীর ছেলে।
পঞ্চগড় পৌরসভার কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান চৌধূরী ইরান আরিফের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্বজনেরা জানান, দুপুরে শহরের মসজিদপাড়া এলাকায় সংঘর্ষের সময় আরিফুরের মাথায় গুলি লাগে। তাকে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থান্তান্তর করা হয়।
এদিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মিডিয়া সেলের মাহমুদ আহম্মেদ সুমন জানান, সংঘর্ষের তাদের সম্প্রদায়ের একজন নিহত হয়েছে, তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে শুক্রবার জুমার নামাজের পর পঞ্চগড় পৌরসভা এলাকার কয়েকটি মসজিদ থেকে বিক্ষোভকারীরা একত্র হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। পরে মিছিলটি আহাম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসার দিকে রওনা হয়। এসময় পঞ্চগড় চৌরঙ্গি মোড় এলাকায় পুলিশ মিছিলটিকে আটকে দেয়। এরপর পুলিশের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।
বিক্ষোভকারীদের দমাতে অসংখ্য রাবার বুলেট, টিয়ারশেল এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এসময় জেলা শহরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। শহরের বেশ কিছু বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সন্ধ্যার পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়লে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। সংঘর্ষ চলাকালে শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অন্তত ২০-২৫টি বাড়িঘর ও জেলা শহরের চারটি দোকানের মালামাল বের করে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা জানান, শেষ নবীকে অস্বীকার করে গোলাম আহমদকে নবী মনে করে আহমদিয়া সম্প্রদায়। তাই ইসলামের নামে তাদের কোনো জলসা আয়োজন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মেনে নিতে পারেন না।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. রহিমুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ১৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও ২৭ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। দুইজনকের রংপুর মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। সালানা জলসা বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম রাতে সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।