করোনার পর আরাফাতে হাজিদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ

হজের দ্বিতীয় দিন সৌদি আরবের মিনা থেকে আরাফাত ময়দানে পৌঁছেছেন বিশ্বের প্রায় ১০ লাখ হাজি। করোনা মহামারির দুই বছর পেরুনোর পর এই প্রথম আরাফাত ময়দান দেখলো এত বড় জনসমাগম।

শুক্রবার মিনা থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা বাসে করে দলে দলে আরাফাত ময়দানে উপস্থিত হতে থাকেন হাজযাত্রীর। সবারই মুখে ধ্বনিত হচ্ছিল একটি বাক্য— লাব্বাইক আলা হুমা লাব্বাইক।

হজের দ্বিতীয় দিন এই ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন তারা, আদায় করবেন জোহর ও আসরের নামাজ। সেই সঙ্গে শুনবেন খুৎবা।

সূর্যাস্তের পর নিকটবর্তী এলাকা মুজদালিফায় যাবেন হজযাত্রীরা, সেখানে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় শেষে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাবেন, তারপরদিন সকালে শয়তানের উদ্দেশে পাথর নিক্ষেপ করে পশু কোরবানির মধ্যে দিয়ে শেষ হবে হজ।

আরাফাতের এই ময়দান ও তাতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে তাকা পাথুরে ঢিবি মুসলিমদের কাছে ‘করুণার পর্বত’ নামে পরিচিত। আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে এই আরাফাতের ময়দানেই নিজের শেষ ভাষণ দিয়েছিলেন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহম্মদ (সা.)। ইতিহাসে তার সেই ভাষণ ‘বিদায় হজের ভাষণ’ নামে পরিচিত।

চলতি বছর সৌদি সরকার ১০ লাখ হজযাত্রীকে হজের অনুমতি দিয়েছে, তাদের মধ্যে মধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ লাখই বিদেশি।

মিশর থেকে সৌদি আরবে আসা ৪৯ বছর বয়সী হজযাত্রী সাদ ফারহাত খালিল এএফপিকে বলেন, ‘অন্যান্য হজযাত্রীদের মতো আমিও এখানে আসতে পেরে খুবই খুশি। করোনা মহামারির সময়ে এটি সবচেয়ে বড় হজ। যদিও এখানে মানুষজন খুব বেশি নেই।’

‘আজ এখানে মাত্র ১০ লাখ হজযাত্রী এখানে উপস্থিত আছেন। কিন্তু সৌদি সরকার যদি অনুমতি দিত, তাহলে এখানে আজ অন্তত ১ কোটি হজযাত্রীকে দেখতে পেতাম আমরা।’

উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া থেকে আসা ৫৮ বছর বয়সী হজযাত্রী আফিফ ঘানিমি বলেন, ‘চারদিকে একটা আধ্যাত্মিক পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা খুব ভালো লাগছে।’

‘আমি আল্লাহর কাছে বিশ্বের সব দেশের জনগণ ও মুসলিমদের সুস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রার্থনা করেছি। যদি আল্লাহ চান, যে কোনো অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হতে পারে।’

এদিকে চলতি মৌসুমে সৌদি আরবের গড় তাপমাত্রা থাকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর। এই আবহাওয়ায় কষ্ট পাচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীরা।

তবে হাসিমুখেই তারা মেনে নিচ্ছেন এই কষ্ট। ইরাক থেকে হজ করতে আসা ৬৪ বছর বয়স্ক নারী লায়লা বলেন, ‘আমরা এই কষ্ট সহ্য করব, কারণ আমরা হজে এসেছি। আমরা যত বেশি কষ্ট করব, ততই আমাদের ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুল হবে।’

বিদেশি হজযাত্রীদের জন্য করোনা মহামারির ২ বছর পর সীমান্ত খুলে দেওয়া সৌদি সরকার অবশ্য বিগত যে কোনো বছরের তুলনায় এবার হাজিদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সৌদি দৈনিক আরব নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি বছর হজযাত্রীদের জন্য ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র দুই শহর মক্কা ও মদিনায় ২৩টি হাসাপাতাল ও ১৪৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এসব হাসপাতালের শত শত শয্যা বিশেষভাবে বরাদ্দ করা হয়েছে অত্যাধিক গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের জন্য।

ইসলাম ধর্মের পাঁচটি প্রধান স্তম্ভের মধ্যে হজ অন্যতম। করোনা মহামারির আগ পর্যন্ত প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলিম সৌদি আরবে যেতেন হজ পালন করতে। মহামারির আগের বছর দেশটিতে হজ পালন করতে গিয়েছিলেন ২৫ লাখ হজযাত্রী।

মহামারির ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে কারণে ২০২০ সালে বিদেশি হজযাত্রীদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে সৌদি সরকার, দেশের নাগরিকদেরও হজ করতে নিরুৎসাহিত করা হয়। বিশেষ অনুমতিতে ওই বছর মাত্র কয়েক হাজার মানুষ হজ করেছিলেন।