মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ভোটের দিনেও ছুটি নেই চা শ্রমিকদের। এতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন চা শ্রমিকরা। এ অবস্থায় ভোটের দিন চা বাগানে সাধারণ ছুটি কার্যকর করতে রোববার (২৬ মে) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন চা শ্রমিকরা।
অবশ্য ভোটের দিন নিজেদের নির্ধারিত ছুটি ভোগ করতে পারবে বলে জানিয়েছে চা বাগান কর্তৃপক্ষ।
আগামী বুধবার (২৯ মে) কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সাধারণত ভোটের দিন সংশ্লিষ্ট উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে থাকে সরকার।
চা শ্রমিকরা জানান, কমলগঞ্জ উপজেলার ২২টি চা বাগানের প্রায় ৪০ হাজার ভোটার রয়েছেন। বুধবার ভোট উপলক্ষ্যে সাধারণ ছুটি নিয়ে কিছু বলতে নারাজ বাগান কর্তৃপক্ষ। এদিন নিজেদের নির্ধারিত ছুটি থেকে ছুটি নিতে পারবেন বলে জানানো হয়। এতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে বিপাকে পড়েছেন চা শ্রমিকরা।
এ অবস্থায় উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি চা বাগানেও কার্যকর করার দাবিতে রোববার (২৬ মে) চা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্ণিং অফিসারের লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়- উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি যদি উপজেলার সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হয়, তাহলে চা শ্রমিকরা যেন এই সাধারণ ছুটি থেকে বঞ্চিত না হয়। ।
লিখিত আবেদনে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভোটগ্রহণের দিন ২৯ মে বুধবার সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। কিন্তু কমলগঞ্জের চা বাগান ব্যবস্থাপক এই ছুটি দিতে সম্মত হয়েছেন এমন সংবাদ আমাদের কাছে নেই। বাগান কর্তৃপক্ষের কেউ বলছেন উপজেলার অন্য চা বাগান ছুটি দিলে আমরাও দিব। কেউ বলছেন আমাদের পাওনা ছুটি হতে ছুটি নিয়ে নিতে। কেউ বলছেন বুধবারে ছুটি দিলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববারে কাজ করে দিতে হবে।
আলীনগর চা বাগানের চা ছাত্র যুব পরিষদের নেতা সজল কৈরী বলেন, এতদিন যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলো নির্বাচনে চা বাগানে ছিল সাধারণ ছুটি। ফলে ছুটির মধ্যে থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে চা শ্রমিক ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। আর এবার কাজের চাপ আর ভোটের চিন্তা দুটি মাথায় থাকলে চা শ্রমিকদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালির (আঞ্চলিক) কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা বলেন, এ অবস্থায় চা শ্রমিক ভোটাররা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তারা যদি ‘আনলিভ’ নেন তা হলে পরের সাপ্তাহিক ছুটির দিন কাজ করতে হবে। এটি নির্বাচনে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী বলেন, কমলগঞ্জে ২২টি চা বাগানে প্রায় ৪০ হাজার ভোটার রয়েছে। সাধারণ ছুটি না হলে সব চা শ্রমিক নিজেদের নির্ধারিত ছুটি থেকে একদিনের ছুটি নিয়ে ভোট দেবেন কিনা তা নিয়ে তারা চিন্তিত। তারা ‘আনলিভ’ নিলে আবার পরে কাজ করে তা পুষিয়ে দিতে হবে।
আলীনগর চা বাগান ব্যবস্থাপক হাবিব আহমেদ চৌধুরী বলেন, ভোটের দিন চা শ্রমিকরা একদিনের ‘আনলিভ’ নিয়ে ভোট দিতে পারবেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্ণিং অফিসার জয়নাল আবেদীন বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চা বাগানও বন্ধ থাকবে। চা বাগানে তারা তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভোটের দিন ছুটি দিয়েছে। পরে তারা অন্যভাবে কভার করবে।