সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে এক নির্মাণ শ্রমিককে চুরির অপবাদ দিয়ে নয়ন নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এতে আরো এক নির্মাণ শ্রমিককে আহত অবস্থা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শুক্রবার (০৯ জুন) সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে এ নির্মম ঘটনাটি ঘটে। নিহত নয়নের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়।
জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা শ্রমিকদের থাকার রুমে হাত পা বেঁধে প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী পেটায় দুই নির্মাণ শ্রমিককে। একপর্যায়ে নয়ন নামের নির্মাণ শ্রমিক অজ্ঞান হয়ে পড়লে কর্মকর্তারা তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে অন্যান্য সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় আটক মূল অভিযুক্তসহ চারজনকে আটক করেছে। আটক চারজন হলো, দিনাজপুরের রুবেল (৩২), কুড়িগ্রামের আমিনুল ইসলাম, আয়নাল ও সাবান আলী।তারা সকলেই ওসমানী হাসপাতালের নির্মানাধীন ভবনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামাল এন্ড কোং-এ কর্মরত এবং মালিকপক্ষের আত্মীয় বলে জানা গেছে।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক ফজলুল হক জানান, অর্থসংকটের কথা বলে গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে শ্রমিকের কাজ নিয়েছিলেন বিশ্বনাথের যুবক নয়ন।
শুক্রবার (০৯ জুন) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নির্মাণ শ্রমিক নয়ন ও আইয়ুব আলীকে ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ও চারটি মোবাইল চুরির অভিযোগে একটি রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের হাত পা বেঁধে লাঠিসোঁটা ও রড দিয়ে নির্মম নির্যাতন চালান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ঠিকাদার ও ম্যানেজারের লোকজন।
নির্যাতনকালে নয়ন চিৎকার করে পানি খাওয়ার অনুরোধ জানালে তাকে প্রস্রাব খাওয়ানো হবে বলা হয়। দীর্ঘ প্রায় ২ ঘন্টা চলে নির্যাতন।
একপর্যায়ে গুরুতর আহত অবস্থায় নয়নকে ফেলে রেখে ঠিকাদার ও ম্যানেজারের লোকজন চলে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় সকাল সোয়া ৯টার দিকে নয়নকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যান্য শ্রমিকের দেওয়া তথ্যমতে পরবর্তীতে আরও এক শ্রমিককে পুলিশ হাত পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, শ্রমিক হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চুরির কোন নিদর্শন পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরাধী যেই হোক তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে, অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামাল এন্ড কোং এর বিরুদ্ধে রয়েছে শ্রমিক নির্যাতনসহ আরও নানা অভিযোগ। একাধিক নির্মাণ শ্রমিক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নির্যাতন ও নিয়মিত মজুরি না দেওয়ার অভিযোগ করেন।
এছাড়া গেল ৩ জুন ওই প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে লোহার পাইপ পড়ে মারা যান দেলোয়ার হোসেন নামের এক সেনাসদস্য। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামাল অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. জামাল উদ্দিন।