ওসমানীনগরে রাস্তায় দেয়াল, গৃহবন্দি তিন পরিবার

সিলেটের ওসমানীনগরে শত বছরের পুরোনো বসতবাড়ির চলাচলের একমাত্র রাস্তায় প্রভাবশালী কর্তৃক পাকা দেয়াল নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ফলে তিনটি পরিবারের লোকজন গত ২০ দিন ধরে গৃহবন্দি রয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের শরিষপুর এলাকায়।

জানা যায়, উপজেলার শরিষপুর গ্রামের প্রভাবশালী দুদু মিয়া ও লুৎফুর মিয়াসহ তাদের সহযোগীরা রাতের আধাঁরে রাস্তার উপর প্রায় ১০ ফুট উচুঁ পাকা দেয়াল নির্মাণ করে রাস্তাটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেন। এতে তিনটি পরিবারের ৩০ জন মানুষের চলাচলের বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে গত ২ আগস্ট ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার পারকূল মৌজার জে-এল, নং ৯৪/৯১ স্থিত শরিষপুর গ্রামস্থ বসতবাড়িতে পূর্বপুরুষের আমল থেকে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন ভুক্তভোগী আব্দুল মতলিব, আব্দুল মালিক ও মাওলানা আব্দুল গফুর। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন সোয়ারগাঁও-সরিষপুর-সৎপুর বাজার এলজিইডির রাস্তা থেকে ভুক্তভোগী পরিবারের বসতবাড়ির যানবাহনসহ চলাচলের একমাত্র রাস্তা বিদ্যমান। এলাকার বিশিষ্ট সালিশ ব্যক্তিত্ব নূর উদ্দিন আহমদ নুনু ও আব্দুল হাই মশাহিদ দয়ামীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকাকালিন সরকারিভাবে বসতবাড়ির চলাচলের ওই রাস্তাটির মাটি ভরাট ও ইটসলিংয়ের কাজ করা হয়।

সম্প্রতি এলাকার প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে তিনটি পরিবারের চলাচলের ওই রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়ার পাঁয়তারায় একের পর এক হামলা ও সাজানো মামলা ছাড়াও নানাভাবে পরিবারের সদস্যদের নাজেহাল করে আসছে প্রভাবশালী দুদু মিয়া ও লুৎফুর রহমানসহ তাদের সহযোগীরা। যার ধারাবাহিকতায় দুদু মিয়া ও তার সহযোগীরা গত ১৬ জুন রাতের আঁধারে রাস্তার মধ্যস্থলে প্রায় ২৫ হাত জায়গার মাটি কেটে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দিয়ে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী করে তোলেন। ভুক্তভোগীরা নিরীহ থাকায় দুদু ও তার সহযোগীদের এসব অত্যাচার-নির্যাতন নিরবে মেনে নিয়ে কোনোরকমে ওই কাটা রাস্তা দিয়ে চলাচল করে আসছিলেন।

গত ১৮ জুলাই প্রভাবশালী দুদু মিয়া ও লুৎফুর মিয়াসহ তাদের সহযোগীরা রাতের আঁধারে ভুক্তভোগী পরিবারের বসতবাড়ি থেকে বের হওয়ার ওই রাস্তার উপর প্রায় ১০ ফুট উচুঁ পাকা দেয়াল নির্মাণ করে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেন। ভুক্তভোগীরা পরদিন সকালে তাদেরকে গৃহবন্দি করে রাখার কারণ জানতে চাইলে দুদু মিয়াসহ তার সহযোগীরা সংঘবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় এলোপাতাড়ি হামলা করলে তিন ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা মারাত্মকভাবে আহত ও রক্তাক্ত জখম হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লুৎফুরসহ তার দুই সহযোগীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

পরবর্তীতে রাস্তায় দেয়াল নির্মাণের দোষ স্বীকার করে মুচলেকার মাধ্যমে দুইজন ও ধৃত লুৎফুর আদালতের মাধ্যমে জামিনে বেরিয়ে আসেন। তারা জামিনে বের হয়ে ভুক্তভোগীদের শুধু গৃহবন্দি করে রাখা নয়, নিরীহ তিন ভাইকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটাবে বলেও হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন।

অভিযোগকারী আব্দুল মুতলিবসহ ভুক্তভোগীরা বলেন, চলাচলের কোনো রাস্তা না থাকায় আজ ২০ দিন যাবত আমরা গৃহবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। রাস্তা বন্ধ থাকায় বিশেষ করে আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল ও মাদ্রাসায় যেতে পারছে না। পরিবারের অসুস্থ লোকজনকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। জোরপূর্বক নির্মিত দেয়ালটি অপসারণ করে চলাচলের রাস্তা সুগম করতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

অভিযুক্ত দুদু মিয়া বলেন, আমি কারও রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ করিনি। প্রতিপক্ষ অযথা আমাদেরকে হয়রানি করছে বিভিন্ন মামলা দিয়ে।

দয়ামীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজ মো. ফখর উদ্দিন বলেন, ইউএনও সাহেবের মাধ্যমে বিষয়টি আমি জেনেছি। দুইপক্ষকে ডেকে ইউএনও সাহেব বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, হামলার ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়িত তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আটককৃতরা দোষ স্বীকার করে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটাবে না বলে পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়েছে। এরপরও যদি ওরা রাস্তার দেয়াল অপসারণ না করে, তাহলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।