সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

ওসমানীনগরে কবরস্থানের রাস্তা দখলে মরিয়া সুমন বাহিনী

ভূমিখেকো ও সন্ত্রাসী সুমন মিয়া ও তার লোকজনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারের ভেরুখলা গ্রামের বাসিন্দারা। কবরস্থানের সরকারি রাস্তা দখলে নিতে অপপ্রচারসহ নানা হুমকিও দেয়া হচ্ছে তাদেরকে। সুমন বাহিনী প্রকাশ্যে দিচ্ছে সশস্ত্র মহড়াও। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকাবাসীর মাঝে।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করে ভেরুখলা গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষে এ অভিযোগ করেন আনহার মিয়া।

লিখিত বক্তব্যে আনহার মিয়া বলেন, ‘ভূমিখেকো ও সন্ত্রাসী সুমন চক্রের রোষানলে পড়ে গ্রামের সাধারণ লোকজন বিপর্যস্থ। আমাকে নিয়ে সংবাদ মাধ্যমসহ নানা যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি এমন কোনো কাজ করছি না, যাতে বিতর্কিত হই। বরং সুমন ও তার সহযোগীদের একের পর এক ভূমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় আমাকে সমাজে হেয় করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গ্রামের রত্নাখালের পাশঘেষে কবরস্থানের সরকারি রাস্তা রয়েছে। ওই রাস্তা দখলে দীর্ঘদিন ধরে পাঁয়তারা করছে সুমন ও তার সহযোগীরা। ২০১২ সালে গ্রামের লোকজন এই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য তখনকার গোয়ালাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিকের সহযোগিতা চান। পরে গ্রামের লোকজন চাঁদা তুলে রাস্তাটি সংস্কার করেন। সেসময় চেয়ারম্যানের কাছে গ্রামের লোকজনের দেয়া দরখাস্তে সুমনের বাবা ইসকন্দর, ভাই আব্দুল মতিন, চাচাতো ভাই শফিক মিয়া, ভাতিজা লিটন মিয়ারও স্বাক্ষর ছিল। ২০২৩ সালে এই রাস্তার দক্ষিণ পাশে ৬ দশমিক ৭৮ শতক ভূমির বিনিময় সূত্রে মালিক হন গ্রামের ইসকন্দর আলীর ছেলে সুমন মিয়া। তিনি জমির মালিক হয়ে বাউন্ডারি দেওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি রাস্তার প্রবেশস্থল বন্ধ করতে দেওয়াল নির্মাণ শুরু করলে গ্রামের লোকজন আপত্তি জানান। কারণ ওই দেয়াল নির্মাণ হলে রাস্তা দিয়ে যেমন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে, তেমনি লাশ নিয়ে কবরস্থানেও যাওয়া যাবে না।’

তিনি বলেন, সুমনের নানামুখী ষড়যন্ত্রে অতিষ্ট গ্রামের লোকজন আইনের দ্বারস্থ হন। পঞ্চায়েতের পক্ষে রফু মিয়া ২০২৩ সালের ২৫ মে আদালতে ১৩৩ ধারায় মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয় ভূমির মালিক সুমন মিয়া ও তার সহযোগী মিন্টু মিয়া, আব্দুন নূর, আব্দুল হান্নান, শফিক মিয়া ও ফয়সল মিয়াকে। মামলা দায়েরের পর আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য ওসমানীনগরের সহকারি কমিশনার (ভূমি)কে দায়িত্ব দেন। পরে সরেজমিন তদন্তের মাধ্যমে রিপোর্ট দেন সহকারি কমিশনার (ভূমি)। রিপোর্টে সরকারি রাস্তা দখল করতে সুমন মিয়ার আগ্রাসনের বিষয়টি ফুটে উঠে। তাছাড়া সুমন মিয়া নিজের জমির চেয়ে অতিরিক্ত ভূমি দখলে নিয়েছেন বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে আনহার মিয়া বলেন, ‘আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ১৭ জানুয়ারি সুমন ও তার সহযোগীরা জোরপূর্বক রাস্তা দখল করে দেওয়াল নির্মাণ করতে যায়। এ সময় গ্রামের লোকজন বাধা দিলে তাদের উপর সশস্ত্র হামলা করা হয়। এতে বিলাল মিয়া গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় ২৯ জানুয়ারি পঞ্চায়েতের পক্ষে রফু মিয়া বাদি হয়ে সুমন মিয়া, মিন্টু মিয়া, আব্দুন নুর, আব্দুল হান্নানকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলা দায়েরের পর সুমন ও তার লোকজন ক্ষেপে উঠে। তারা গ্রামের ভেতরে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। এতে গ্রামের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে গ্রামে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণের কাজ হয়। গ্রামের মানুষ খুব কষ্ট করে ২০২১ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করেন। কিন্তু মসজিদ নির্মাণের সময় দখলবাজ ওই সুমনের ভাই লন্ডন প্রবাসী আব্দুল মতিন লন্ডনে টাকা তুলে পঞ্চায়েত ও মসজিদের নাম ভাঙিয়ে। মতিন কোনো টাকাই দেননি মসজিদ কমিটির কাছে। উল্টো সুমন ও মতিন এবং তাদের সহযোগীরা গ্রামের সাধারণ লোকজনকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। গ্রামবাসী তাদের নির্যাতন ও হয়রানি থেকে মুক্তি চান। এব্যাপারে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী সহযোগিতা প্রয়োজন।’

সংবাদ সম্মেলনে ভেরুখলা গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মন্তাজ উল্লাহ, ইসহাক মিয়া, আব্দুল মুতলিব, সানুর মিয়া, আবুল কালাম, রফু মিয়া প্রমুখ।