পলো বাওয়া উৎসব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের একটি অংশ। আগেকার দিনে বছরে একবার এই উৎসবটি পালন করতেন হাওর পাড়ের লোকজন। উৎসবের সপ্তাহ খানেক আগে গ্রামে-গঞ্জে তৈলের টিন বাজিয়ে জানিয়ে দেয়া হতো উৎসবের তারিখ। এমন খবর জানার পর লোকজন পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে বাজার থেকে নতুন পলো ক্রয় করতেন।
উৎসবের দিন সকালে নিজ নিজ পলো, হাতাজাল, উড়ালজাল ও লাঠিজালসহ নানা ধরণের মাছ ধরার জিনিসপত্র নিয়ে হাওর পাড়ে গিয়ে সমবেত হতেন। ঘড়ির কাটায় নির্ধারিত সময় বেজে ওঠলেই সবাই মিলে এক সঙ্গে পলো নিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন ধরণের জাল দিয়েও মাছ শিকার করে অনেকটা আনন্দ পেতেন।
বর্তমান যুগে কালের গর্ভে সেই উৎসবটি বিলীন হতে চলেছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই পলো বাওয়া উৎসব কি সেটা জানেন না। ঐতিহ্যের ধারা রক্ষার্থেই সেই উৎসবটি ধরে রেখেছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরী গ্রামের লোকজন।
প্রতি বছর মাঘ মাসের প্রথম তারিখে গ্রামের লোকজন তাদের দক্ষিণ বিলে এই উৎসবটি পালন করে থাকেন। এই তারিখে উৎসবটি পালন করতে অনেক প্রবাসীরা দেশের বাড়িতে চলে আসেন। এবছরও উৎসবটি উপভোগ করতে অনেক প্রবাসীরা সন্তানদের নিয়ে দেশে এসেছেন।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ১ মাঘ সোমবার সকাল থেকে লোকজন পলোসহ মাছ ধরার বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ে বিলের পাড়ে সমবেত হতে থাকেন। দুপুরে ১২টায় প্রবাসীসহ এক সঙ্গে গ্রামের শত শত লোক পলো নিয়ে বিলের পানিতে ঝাপিয়ে পড়েন।
উৎসবটি উপভোগ করতে গ্রামের পুরুষ, মহিলা, শিশু, কিশোর, কিশোরী ও প্রবাসী শিশুরাসহ সবাই বিলের পাড়ে উল্লাস করেন।
বিলের পাড়ে উৎসব উপভোগ করতে যাওয়া গ্রামের মকবুল মিয়া (৯৫) নামের এক বৃদ্ধ বলেন, তাদের পূর্বপুরুষরা প্রায় দেড়শত বছর ধরে এই উৎসবটি পালন করে আসছেন। তাই তারা প্রতি বছর এই উৎসব পালন করে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আসছেন।
ওই উৎসবে পলো দিয়ে প্রবাসীসহ গ্রামের অনেকেই রুই, রাঙ্গা কার্পিও, বোয়াল, শোল ও মাগুর মাছসহ হরেক রকমের মাছ ধরেছেন।