বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের বিদ্যুতের গণশুনানির ফলাফল সাধারণত ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে দেওয়া হলেও এবারের গণশুনানির ফলাফল দেওয়া হবে চলতি মাসেই। এমন তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল।
রোববার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনের শহীদ এ কে এম শামসুল হক খান অডিটোরিয়ামে বিদ্যুতের দাম পুনর্নির্ধারণের গণশুনানি শেষে সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
চেয়ারম্যান বলেন, সবাইকে খুশি করা কঠিন। তবে ভোক্তাও যাতে ক্ষুব্ধ না হয়, আবার কোম্পানিগুলোও যাতে চলতে পারে সেভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত কমিশনের আদেশে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, হয়ত মুনাফা কিছুটা কমেছে। কমিশনের দেওয়া আদেশে এখনও কেউ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
আব্দুল জলিল বলেন, ১৯৭১ সালে বাজারে কাপড় ছিল কিন্তু কেনার লোক ছিল না। দাম বাড়িয়ে নিলেন কিন্তু দেখা গেল শিল্প বন্ধ হয়ে গেল, তাহলে কী হবে? ভোক্তার দিকটাও বিবেচনার নিতে হবে। সাবধানে পা ফেলতে হবে আগামী দুই বছর।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক, মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান ও কামরুজ্জামান। কেউ কোনো বক্তব্য বা কোনো কাগজপত্র জমা দিতে চাইলে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে বলেছে কমিশন।
শুনানিতে বিইআরসির কারিগরি কমিটি প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ১ টাকা ১০ পয়সা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। সেই হিসাবে খুচরা বিদ্যুতের মূল্য গড়ে ৭ দশমিক ১৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ দশমিক ২৩ পয়সা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে গড়ে দাম বৃদ্ধি পেতে পারে ১৫ দশমিক ৪৩ ভাগ।
পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ট্যারিফ মূল্য গড়ে ৭.৫৬ টাকা, পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ৬.৬৫ টাকা, ডিপিডিসি ৮.০৮ টাকা, ডেসকো ৮.১ টাকা, ওজোপাডিকো ৭.৩৫ টাকা, নেসকোর ট্যারিফ ৭.০৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার গড় দাঁড়ায় ৭.১৩ টাকা।
বিতরণ কোম্পানিগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিইআরসির কারিগরি কমিশন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের খুচরা ট্যারিফ ৮.৭৪ টাকা, পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের ক্ষেত্রে ৭.৬৩ টাকা, ডিপিডিসির ক্ষেত্রে ৯.৪৩ টাকা, ডেসকোর ক্ষেত্রে ৯.৪১ টাকা, ওজোপাডিকোর ক্ষেত্রে ৮.৫৪ টাকা এবং নেসকোর ক্ষেত্রে ৮.১৬ টাকা করার সুপারিশ করে।
শুনানিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) তাদের প্রস্তাবে জানায়, দাম না বাড়লে তাদের ক্ষতি হবে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। একইভাবে পিডিবি ২৩৪ কোটি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ১ হাজার ৫৫১ কোটি, ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা, নর্দান ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) বলছে তাদের ৫৩৫ কোটি টাকা লোকশান হবে। ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) কোনো আর্থিক অংক দাঁড় না করালেও বলছে দাম না বাড়লে তাদের ক্ষতি হবে।
গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এরপর বিদ্যুতের খুচরা দাম বৃদ্ধির আবেদন করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। সবগুলো প্রতিষ্ঠান বলছে, পাইকারি দাম বৃদ্ধির পর খুচরা দাম না বাড়ালে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পায়।