এ বছরই পাস হবে সর্বজনীন পেনশন আইন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দের ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২২’ প্রণয়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আইনের খসড়াও ইতিমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে এ বছরের মধ্যেই আইনটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে নির্ভরশীল মানুষের বর্তমান হার ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০৫০ সালে যথাক্রমে ২৪ শতাংশ এবং ২০৭৫ সালে ৫৮ শতাংশে বৃদ্ধি পাবে। ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে সরকারি চাকরি করছেন মাত্র ১৪ লাখ মানুষ। এসব সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পেনশন সুবিধা রয়েছে। বাকি ১৮ থেকে ৫০ বছরের বেশির ভাগ মানুষ কৃষি, বেসরকারি খাত, ব্যবসায়ী কিংবা অন্যান্য পেশায় জড়িত রয়েছেন। এদের কোনও পেনশন সুবিধা নাই।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। পর্যায়ক্রমে গড় আয়ু বেড়ে ৮৫ বছর হবে। এতে ভবিষ্যতে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সরকার ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২২’প্রণয়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনি অঙ্গীকার পূরণে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবার জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যেই। দেশের ১৮-৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক সর্বজনীন ব্যবস্থার আওতায় আসবেন।

বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় বৃদ্ধকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে একটি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের অঙ্গীকার করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে সরকার কর্তৃক প্রণীত জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রে একটি ব্যাপকভিত্তিক সমন্বিত অংশগ্রহণমূলক পেনশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে আমি পেনশন পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমি অতি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা দিচ্ছি যে, সরকার আগামী অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে। ফলে ভবিষ্যতে বর্তমানে চলমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম ধীরে ধীরে সংকুচিত করে আনার সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীর তুলনায় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক বেশি, বিধায় একটি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি চালু করাটা সময়ের দাবি। সরকার বয়স্ক ও দুস্থ জনগোষ্ঠী বিভিন্ন কার্যক্রমের আওতায় সামাজিক সুরক্ষাকল্পে প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ সুবিধাভোগীকে সহায়তা প্রদান করছে। সরকারের নির্বাচনি অঙ্গীকার বিবেচনায় বয়স্ক ও দুস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী নিশ্চিত করার জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সরকার ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২২’ প্রণয়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, সবার জন্য পেনশন অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে এই স্কিমের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।