সিলেটের মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে বিতর্কের পর এবার দলীয় গঠনতন্ত্র না মেনে সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ‘বির্তকিত’ ব্যক্তিকে দিয়ে রাতের আধারে ঘোষণা দেওয়া নতুন কমিটি বাতিল করা না হলে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতারা।
তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক নেতা হিরণ মিয়াকে নবগঠিত সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আমির উদ্দিন। তিনি সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন- ‘সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিলো ২০০৫ সালে। ওই সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বাদশা সভাপতি ও নিজাম উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর সম্মেলন হলেও কাউন্সিল হয়নি। সম্মেলনের একদিন পর নিজাম উদ্দিনকে সভাপতি ও হিরণ মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। তবে সে সময় হিরণ মিয়া যুক্তরাজ্যের কর্টন শহর বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন অভিযোগ উঠলে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তখন ওই কমিটি ঘোষণার দুদিনের মাথায় বাতিল হয়।’
তিনি বলেন, কমিটিতে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে জামায়াত-বিএনপিঘেষা ব্যক্তিদের পদ-পদবী দেওয়ার অভিযোগ উঠলে এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদিনের মাথায় সেই কমিটি বাতিল করে মফিজুর রহমান বাদশাকে ফের সভাপতি ও নিজাম উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় দুই বছর পর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের মফিজুর রহমান বাদশা মৃত্যুবরণ করলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন কমিটি গঠনের প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরণের আলোচনা কিংবা সম্মেলন ছাড়াই গত ২৩ অক্টোবর রাতে হঠাৎ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ২৩ অক্টোবর গঠিত কমিটিতে উপজেলার ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কান্দিগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিনকে সভাপতি ও মোগলগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান হিরণ মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু হিরণ মিয়া যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে ২০১৫-১৬ সালে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যুক্তরাজ্যে তিনি পদবীধারী নেতাও ছিলেন। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের সদস্যও নয় হিরণ মিয়া। হঠাৎ করেই তিনি সাধারণ সম্পাদক হলেন আবার যা তৃণমূল নেতাকর্মীরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আমির উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে বলেন- মফিজুর রহমান বাদশার মৃত্যুর পর আমরা জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে বার বার ধর্ণা দিলেও তারা কমিটি গঠনে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। অথচ রাতের অন্ধকারে হঠাৎ এই বিতর্কিত কমিটি গঠন করায় উপজেলাজুড়ে ত্যাগী ও তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। অবিলম্বে এ কমিটি বাতিল ঘোষণা না করলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ শাহানুর, কান্দিগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সাহাব উদ্দিন ও শাহাব উদ্দিন আহমদ, জেলা তাঁতী লীগ নেতা মো. আব্দুস সালাম, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সিলেট সদর উপজেলা শাখার নেতা মো. ইফতেখার হোসেন বাবুল, সদর উপজেলা যুবলীগ নেতা সমর উদ্দিন ফখর, সদর উপজেলা তাঁতী লীগ নেতা এম এ মতাহির, যুবলীগ কর্মী রাইসুল হক রাসেল, মো. আনছার উদ্দিন, সদর উপজেলা যুবলীগ নেতা মোয়াজ্জিম হোসেন, শাহাজান কবির, আমিনুর রশিদ, মো. নুরুল আমিন খুকু, নিজাম আহমদ, কুতুব উদ্দিন, তাজির আলী, ফয়ছল আহমদ, মো. মকবুল হোসেন, নুর উদ্দিন ও ওস্তার আহমদ রাসেল প্রমুখ।