এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে কোটি টাকা ছাড়িয়েছে রেমিট্যান্স

বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয়ে ভাটা পড়লেও যতই দিন যাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং জনপ্রিয় হচ্ছে দেশে। প্রবাসীরা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বেশি করে পাঠাচ্ছেন। এর ফলে জুলাই-সেপ্টেম্বরে (তৃতীয় প্রান্তিক) এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫২ শতাংশ এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। আর এক বছরের ব্যবধানে প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন সাড়ে ৪২ শতাংশ। ৩১টি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা এই রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এ পর্যন্ত তা এক কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ সব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ায় প্রচলিত শাখা খোলার চেয়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমে ২০২১ সালে দেশে ২৯টি থাকলেও বছরের ব্যবধানে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩১টি ব্যাংক এই সেবার আওতায় এসেছে। এ সব ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে আমানত জমা হচ্ছে, ঋণ বিতরণও করা হচ্ছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি। এজেন্টের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার।

২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং অনুমোদন দেওয়ার পর গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন এক কোটি ছয় হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। যা গত জুন পর্যন্ত ছিল ৯৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। তিন মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে সাত হাজার ৩৮০ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা বা ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ওই প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে রুরাল বা গ্রামাঞ্চলে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৯০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর আরবান বা শহরে রেমিট্যান্স এসেছে ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংকসহ ৫টি ব্যাংকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৫৫ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা বা ৫২ শতাংশ। এরপর ডাচবাংলা ব্যাংকে ২৬ হাজার ১০৫ কোটি টাকা বা ২৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ায় ১১ হাজার ১২০ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৪৩, আল আলাফা ইসলামী ব্যাংকে ৫ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৩৫ এবং অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তবে পদ্মা, মেঘনা ও সোনালী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি দেশে।

সার্বিক ব্যাপারে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জিএম আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি প্রোগ্রামে ব্যস্ত থাকায় মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মওলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও ফোন না ধরায় কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। আর সোনালী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে কোনো রেমিট্যান্স না আসায় তা জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী পরিচালক মো. আফজাল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনিও ফোন না ধারায় মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধা বঞ্চিত লোকদের ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান নজর দেন কীভাবে সবাইকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যায়। তা আমলে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে ব্যাংকিং সুবিধায় আনতে বিভিন্ন ব্যাংককে অনুমোদন দেয়। সে সময়ে শহরের ব্যাংক সেবা গ্রামাঞ্চলে কল্পনা মনে হলেও এক দশকে পাল্টে গেছে চিত্র। বর্তমানে ৩১টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।

সূত্র : ঢাকা প্রকাশ