মাশা আমিনিকে হত্যার প্রতিবাদে গত সেপ্টেম্বর থেকে শরু হওয়া আন্দোলন ব্যাপক আকার নিয়েছে ইরানে। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের প্রতি কঠোর হয়েছে ইরানের সরকার।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, বুধবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) পর্যন্ত এক দিনে কমপক্ষে আটজনকে হত্যা করেছে ইরানের নিরাপত্তাবাহিনী।
অ্যামনেস্টি জানায়, গতকাল রাত থেকে আজ পর্যন্ত ইরানের নিরাপত্তাবাহিনী আটজনকে হত্যা করেছে। বিক্ষোভকারী ও মাসা আমিনির কবরস্থানে সমবেত মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে ইরানের নিরাপত্তাবাহিনী।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, দেশটির পশ্চিমের শহর মাহাবাদে ইরানের নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন বিক্ষোভকারী নিহত হন। বিক্ষোভে নিহত এক ব্যক্তির স্মরণে শোকসভায় অংশ নিয়ে বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছেন।
নিরাপত্তাবাহিনী খোরামাবাদের কাছে একটি কবরস্থানে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছেন। মাহাবাদের কর্মকর্তারা বলছেন সন্ত্রাসী-বিচ্ছিন্নতাবাদী দল সরকারি ভবনে হামলা চালাতে বিক্ষোভকারীদের উসকানি দিচ্ছে। কর্মকর্তারা আরও বলেছেন বিক্ষোভকারীরা দখলের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাকেন্দ্রগুলোতে হামলা চালাচ্ছেন।
কয়েকশ মানুষ পৌর গভর্নরের কার্যালয়ে জড়ো হন। তবে সরকারি গণমাধ্যম বলছে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
গত বুধবার রাতে কয়েক হাজার মানুষ ইরানের বড় শহরগুলোর রাস্তায় অবস্থান নেন। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইরান সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
মাশা আমিনি নামের ওই তরুণী গত মাসের শুরুতে ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশ থেকে রাজধানী তেহরানে তার আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। এসময় ‘সঠিকভাবে’ হিজাব না পরায় তাকে আটক করে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ। যুক্তি হিসেবে তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘চুল পুরোপুরি না ঢাকার জন্য মাহসা আমিনিকে আটক করা হয়েছে’। এরপর আটকের তিনদিন পর পুলিশের হেফাজতে হাসপাতালে মৃত্যু হয় মাশার।
পুলিশ জানায় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে তার। তবে মাশার হার্টের কোনো সমস্য ছিল না বলে জানায় তার পরিবার। আন্দোলনকারীদের দাবি নৈতিকতা পুলিশের অত্যাচারেই মারা গেছেন মাশা। ইরানের নারীরা হিজাব ঠিকমতো পরছেন কি না এমন বিষয়গুলোতে নজরদারির জন্য নৈতিকতা পুলিশ নামে বিশেষ বাহিনী গঠন করে ইরান। পাশাপাশি রাস্তায় রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরাও লাগানো হয়। এই ঘটনার পর নৈতিকতা পুলিশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।