ঘুষ গ্রহণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সাবেক এক শিক্ষা কর্মকর্তাকে কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদে পদায়নের জন্য সুপারিশ করেছেন কুড়িগ্রামের তিন সংসদ সদস্য (এমপি)।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এ সুপারিশ করেছেন তাঁরা। পদায়নপ্রত্যাশী ওই কর্মকর্তার নাম খন্দকার আলাউদ্দীন আল আজাদ। তিনি বর্তমানে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তাঁর মূল পদ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
জেলার শিক্ষক নেতা ও শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আজাদ ২০১৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময় শিক্ষকদের থেকে ঘুষ গ্রহণ এবং অনিয়মের অভিযোগে তাঁকে বরগুনায় ‘শাস্তিমূলক’ বদলি করা হয়। কয়েক জেলা ঘুরে তিনি ঠাকুরগাঁও শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে মাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও এমপিও-সংক্রান্ত কাজে শিক্ষকদের থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তাঁকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে বদলির আদেশ দেয় মাউশি। তখন থেকে তিনি সেখানে কর্মরত। সম্প্রতি এই বিতর্কিত শিক্ষা কর্মকর্তা আবারও কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন এবং বদলির জন্য মাউশি মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন।
মাউশিতে দেওয়া আবেদনপত্রের ডান পাশের ওপরে তাঁকে কুড়িগ্রামে পদায়ন ও বদলির সুপারিশ করেছেন কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. হামিদুল হক খন্দকার। ৫ মে তাঁর স্বাক্ষর ও সিল-সংবলিত সুপারিশ নোটে লেখা, ‘ডিজি মাউশি মহোদয়, জরুরি ভিত্তিতে ডিইও (জেলা শিক্ষা অফিসার) কুড়িগ্রাম পদে পদায়ন/বদলির জন্য বিশেষভাবে সুপারিশ করা হলো।’
একই কর্মকর্তাকে কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়নের জন্য সংসদীয় প্যাডে সুপারিশপত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন কুড়িগ্রামের আরেক এমপি (কুড়িগ্রাম-৩) সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে। একই সুপারিশে কুড়িগ্রাম-১ আসনের (নাগেশ্বরী) এমপি এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমানও ডিও লেটার দিয়েছেন।
সংসদ সদস্য হিসেবে দুর্নীতি ও অনিয়মে অভিযুক্ত কর্মকর্তার প্রশংসা করে পুনরায় কুড়িগ্রামে পদায়ন করার সুপারিশ করা সমীচীন হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে বলেন, ‘আমি সকলকে সাদা চোখে দেখি। তাঁর পূর্বের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। যিনি বদলি বা পদায়ন করবেন (মাউশি ডিজি) তিনি যেন আমার সঙ্গে একবার ফোনে কথা বলে নেন। আমি ডিও লেটার প্রত্যাহার করে নিব।’
বিতর্কিত এক সরকারি কর্মচারী বদলির আবেদনে লিখিত সুপারিশ করার বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য হামিদুল হক বলেন, ‘আমি তো জানি না, তিনি দুর্নীতিবাজ। আমি তো সুপারিশ করেছি, অন্য এমপিরা তো ডিও লেটার দিয়েছেন!’
একই বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের মোবাইলে ফোন ও খুদে বার্তা দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘আজাদের মতো দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে বদলির খবরে জেলার শিক্ষক সমাজের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে আবারও কুড়িগ্রামে পদায়ন করা হলে জেলার মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হবে এবং প্রশাসনিক কাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাঁকে কুড়িগ্রামে পদায়ন না করার জোর দাবি জানাই।’
বদলিপ্রত্যাশী আজাদের মন্তব্য জানতে তাঁকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়ে পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলেও তাঁর সাড়া মেলেনি।