ইউরোপের পরাশক্তি সব দলের বিপক্ষে দুর্দান্ত রিয়াল মাদ্রিদ স্প্যানিশ লিগে খেলতে নেমেই একের পর এক ধরাশায়ী হচ্ছে। এবার আরও একটি ম্যাচে বড় ব্যবধানে উড়ে গেছে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা। যেখানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাকে রিয়াল পাখির চোখ বানিয়েছে, সেখানে নিজেদের লিগে রিয়াল যেন নিজেদের ছায়া হয়েই বারবার দেখা দিচ্ছে। বার্নাব্যু ফুটবলারদের এই হারের ম্যাচে নায়ক বনে গেছেন এক আর্জেন্টাইন। তিনি একাই রিয়ালের বিপক্ষে চার গোল করেছেন।
একুশ শতকে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চার গোল করার কীর্তি গড়েছেন ওই ফুটবলার। ভালেন্তিন কাস্তেয়ানোস জিরোনায় হয়ে এই রেকর্ড করেছেন। ২৪ বছর বয়সী এই ফুটবলারের ‘অতিমানবীয়’ নৈপুণ্যে জিরোনা ৪-২ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে রিয়ালকে।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) রাতে এস্তাদি মন্তিলিভিতে ঘরের মাঠে রিয়ালের বিপক্ষে নেমেছিল জিরোনা। স্বাগতিক হয়েই যেন তারা রিয়ালকে ধসিয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল। বল দখলে পিছিয়ে থাকলেও জিরোনা শট নেওয়ার দিক থেকে রিয়ালের সঙ্গে ভালোই টেক্কা দিয়েছে। কেবল তাই নয়, এতে রিয়ালের চেয়েও সফলতা দেখিয়েছে দলটি। মাত্র ২৯ শতাংশ বল দখলে রেখেও তারা ১৩ শটের মধ্যে পাঁচটি লক্ষ্যে রেখেছিল, যার মধ্যে চারটিই সফল। অন্যদিকে, রিয়াল কেবল ১৮ শটের তিনটি লক্ষ্যে রাখতে সক্ষম হয়।
পেটের অসুস্থতায় নিয়মিত গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া এবং পেশির চোটে ফরোয়ার্ড করিম বেনজেমা ও ডিফেন্ডার ডেভিড আলাবাও এই ম্যাচে ছিলেন না। আর তাতেই স্পেন ও ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা ধরা খাবে সেটি নিশ্চয়ই কেউ ভাবেননি।
ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোলের দারুণ একটি সুযোগ আসে রিয়ালের রদ্রিগোর সামনে। লুকা মদ্রিচের নিচু ক্রসে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারের ব্যাকহিল ফ্লিক ঠেকিয়ে দেন জিরোনার এক ডিফেন্ডার। এরপর দারুণ গোছানো এক আক্রমণে দ্বাদশ মিনিটে এগিয়ে যায় জিরোনা। বাঁ-দিক থেকে সতীর্থের ক্রসে ছয় গজ বক্সের মুখে হেডে ঠিকানা খুঁজে নেন অরক্ষিত আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড কাস্তেয়ানোস।
২৪তম মিনিটে রিয়ালের হতাশা বাড়িয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করে স্বাগতিকরা। নিজেদের অর্ধ থেকে আরনাউ মার্টিনেজের উঁচু করে বাড়ানো বল ধরে সঙ্গে লেগে থাকা এডার মিলিতাওকে পেছনে ফেলে বক্সে ঢুকে পড়েন কাস্তেয়ানোস। এরপর ডান পায়ের শটে আন্দ্রি লুনিনকে পরাস্ত করেন তিনি। ১০ মিনিট পর সেই রিয়ালের হয়ে প্রথম ব্যবধান কমান ব্রাজিল ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়াস। ডান দিক থেকে মার্কো অ্যাসেনসিওর ক্রসে দূরের পোস্টে তিনি হেডে বল জালে পাঠান। ম্যাচজুড়ে দর্শকদের মুহুর্মুহু বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার ভিনিসিয়াস সেই গোলে কিছুটা ক্ষত কমান। জবাবও দেন শৃঙ্খলিত কায়দায়।
তবে সেটি ক্ষত কমাতে পারেনি রিয়ালের। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর ৪৫ সেকেন্ডেই ফের দুই গোলের লিড পুনরুদ্ধার করে জিরোনা। ডান দিক থেকে সতীর্থের পাসে বক্সে প্রথম স্পর্শে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন কাস্তেয়ানোস। এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বরে ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে কার্লোস সলেরের পর এই প্রথম লা লিগায় রিয়ালের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করলেন কেউ।
এরপর রিয়ালকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ না দিয়েই শেষ পেরেক ঠুকে দেন কাস্তেয়ানোস। ৬২তম মিনিটে নিজের ও দলের চতুর্থ গোল করেন তিনি আনচেলত্তি শিষ্যদের স্তব্ধ করে দেন। কাস্তেয়ানোস এর আগে সবশেষ যে হ্যাটট্রিক করেছিলেন, সেখানেও তিনি ৪ গোল করেছিলেন। গত বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে নিউইয়র্ক সিটির হয়ে রিয়াল সল্ট লেকের বিপক্ষে গড়েন ওই কীর্তি।
এরপর আর পেরে ওঠেনি সফরকারী রিয়াল। ৭২তম মিনিটে চার গোল করা আর্জেন্টাইনকে তুলে নেয় জিরোনা। ৮৫তম মিনিটে লুকাস ভাজকেজ গোলে পরাজয়ের ব্যবধানই কমে কেবল। ভিনিসিয়াসের কাটব্যাক থেকে শটে গোলটি করেন খানিক আগেই বদলি নামা এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার।
চলতি মৌসুমেই জিরোনা দ্বিতীয় বিভাগ থেকে লা লিগায় ওঠে এসেছিল। রিয়ালকে হারিয়ে তারা অবস্থান নিয়েছে টেবিলের নয় নম্বরেও। অন্যদিকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার সঙ্গে শিরোপার লড়াইয়ে আরও পিছিয়ে পড়ল রিয়াল। ৩১ ম্যাচে ষষ্ঠ হারের তেতো স্বাদ পাওয়া রিয়াল ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে আছে দুইয়ে আছে। তাদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে শীর্ষে থাকা বার্সার পয়েন্ট ৭৬।