রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধ অর্থহীন, যারা অস্ত্র তৈরি করছে, শুধু তারাই লাভবান হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দেশের ২৪টি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারই সঙ্গে শুরু হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধ অর্থহীন। শুধু যুদ্ধ না, তার সঙ্গে আবার নিষেধাজ্ঞা। পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্ব আজকে অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। তারা এখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সাশ্রয় করছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে তারা শঙ্কিত এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘সেখানে আমাদের মতো দেশ, কেবল আমরা উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেছি। একটা লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি আপ্রাণ, ঠিক তখনই আমাদের জন্য এ ধরনের বাধা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু আমাদেরতো থেমে থাকলে চলবে না।’
জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যাপারে সব দেশই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরাও সেটা অনুসরণ করছি।’
অনেক প্রবাসী টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানোর সুযোগ পায় না, তাই বৈধভাবে এ অর্থ দেশে আনার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে উদ্যোগ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর সুবিধা না পাওয়ায় তাদের নির্ভর করতে হয় হুন্ডির ওপর। এরপর আমাদের কিছু লোক আছে বিদেশে এবং আমাদের বিরোধী দলেরও কিছু এজেন্ট আছে। তারা নানাভাবে মানুষকে উসকায় ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাতে। এতে তাদের লাভ হয়।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের কষ্টার্জিত টাকা তারা পকেটস্থ করে এবং কিছু টাকা দেশে পাঠায়। কিন্তু ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালে সেটা নিরাপদ থাকে। হয়তো এক-দুই পয়সা বা দুই-এক টাকা কম বেশি হতে পারে। কিন্তু টাকাটা নিরাপদে তার অ্যাকাউন্টে জমা হবে। সেই ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় টাকা পরিবারকে দিতে পারবে এবং বাকি টাকা ব্যাংকে জমা থাকবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ। সেখানে ৩৮ শতাংশ যুব সমাজ। এই যুব সমাজকে আমরা শুধু বিদেশে প্রেরণ করবো, এটা ভাবলে চলবে না। আমরা দেশে যে অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি, সেখানেও দক্ষ জনশক্তি লাগবে। কাজেই আমরা প্রশিক্ষণ দেবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গৃহকর্মী পাঠাই। তাদের আমরা প্রশিক্ষণ দেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, আমরা যে প্রশিক্ষণটা দেই, সেটা তারা যথাযথভাবে নেয় না। প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় যে টাকাটা দেওয়া হয়, সেটা নেয়। কিন্তু প্রশিক্ষণটা নেয় না। পরে বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়ে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘রফতানি নির্ভর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দিকে আমাদের গুরুত্বারোপ করতে হবে। আমরা পণ্য যেমন উৎপাদন করবো পাশাপাশি পণ্যের নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।