নির্বাচনে প্রার্থী হতে ঋণ ও বিল খেলাপিদের ছাড় দিতে নির্বাচন কমিশনের আইনি সংস্কারের প্রস্তাবে সায় দেয়নি ব্যাংক ও সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো।
সোমবার নির্বাচন ভবনে সিইসি ব্যাংক, সেবা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের শিক্ষকসহ ১৪ জনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর মধ্যে একজন ছাড়া বাকি ১৩ জন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আজ ঋণ ও বিল খেলাপি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অধিকাংশই বলেছেন, ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে এখন যে বিধান রয়েছে তা থাকলেই ভালো হয়। আমরা যেটা প্রস্তাব করেছিলাম- এটাতে উনারা খুব কমফোর্টেবল ফিল করেন না।
বর্তমান আরপিও অনুযায়ী, ঋণ ও বিল খেলাপিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য। তবে এ ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় সিআইবি প্রতিবেদনে যারা খেলাপি হন তারা আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না।
নির্বাচন কমিশন চাইছিল ‘ছোট’ ও ‘বড়’ ঋণ ও বিল খেলাপিদের আলাদা করতে। তাদের যুক্তি, অনেক ক্ষেত্রে ছোট ছোট অঙ্কের কথা প্রার্থীদের জানা থাকে না। যেমন, কারও ক্রেডিট কার্ডের একটি বিল বাকি, কারও বিদ্যুতের একটি বা দুটি বিল বাকি। তারা হয়তো জানেও না এগুলো বাকি। তাই কমিশন চাইছিল, যাদের বিরুদ্ধে ঋণ ও বিল খেলাপির মামলা আছে, কেবল তারা ভোটে অযোগ্য হবেন।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, বর্তমান বিধানে সত্যিকারের যারা খেলাপি নন তারা অযোগ্য হয়ে পড়তে পারেন। ভোটে দাঁড়ানো মৌলিক অধিকার। তাতে যেনতেনভাবে কারও অধিকার খর্ব না করার জন্য ভিন্ন চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সিইসি বলেন, আমরা একটা প্রস্তাব করেছিলাম, স্পিরিটটাকে স্পষ্ট করার জন্য। ঋণ ও বিল আদায়ের জন্য যাদের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা হবে শুধু তাঁদেরই আমরা ঋণখেলাপি হিসেবে গণ্য করব।
বৈঠকে আলোচনার ব্যাপারে সিইসি বলেন, সভায় ব্যাংকাররা আগের বিধানটা কমফোর্টেবল বলছেন। সিআইবি থেকে যে তালিকা সরবরাহ করা হয়, তার ভিত্তিতে খেলাপি নির্ধারিত হয়ে থাকে। মামলা করার বিষয়টি যুক্ত করতে চাইলে তাঁদের আপত্তি নেই।
তিনি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুত-টেলিফোন বিল নিয়ে বাহুল্য মনে হয়েছিল কমিশনের। বিল না দিলে লাইন কেটে দেওয়া যায়। নানা কারণে হয়ত জানেও না বিল খেলাপির তথ্য। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম- তাদের বিরুদ্ধে যদি মামলা হয় বিল খেলাপি বলতে চাই। তবে সিআইবি তালিকা বাদ দিয়ে শুধু মামলাতে খেলাপি বলতে সায় নেই ব্যাংকারদের।
পূবালী ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার দেওয়ান রুহুল আহসান বলেন, ব্যাংকের পক্ষ থেকে সিআইবি রিপোর্টকে প্রাধান্য দিতে বলেছি আমরা। সেই সঙ্গে প্রচলিত আইন যদি সংশোধন করতে চায় তাহলে ওই অংশটি (মামলা) যুক্ত করতে পারে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলা করতে অসুবিধা নেই। মামলা তো করা হয়। সিআইবিতে যাদের নাম থাকবে তাদের ঋণখেলাপি বলতে হবে। মামলা করতে অনেকগুলো ধাপ থাকে। সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
ডেসকোর চিফ ইঞ্জিনিয়ার রশিদুর রহমান জানান, বিল খেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধানে তাদের সম্মতি নেই। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধানই বহাল রাখার পক্ষে তারা মতামত দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ে বিল পরিশোধ না করলেই বিল খেলাপি হয়ে যায় সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি গ্রাহককে জানানো হয়। কিন্তু মামলা করতে গেলে সেবা প্রতিষ্ঠানের নানা ঝুঁকিও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
বৈঠকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়েরর অতিরিক্ত সচিব (ড্রাফটিং) হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডিন সীমা জামান, ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আজিজুল হক পান্না, আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন) শেখ গোলাম মাহবুব, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মাকসুদা বেগম, সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল কদ্দুস, বিটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (ফিন্যান্স অ্যান্ড বাজেট) মাজহারুল ইসলাম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের স্পেশাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট মীর ইকবাল হোসেন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের কান্ট্রি হেড নুর হোসাইন আল কাদেরী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বাজেট) ফারুকুজ্জামান, তিতাস গ্যাসের পরিচালক (অর্থ) অর্পণা ইসলাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।