ঋণ আতঙ্কে ঘুম হারাম মৎস্য খামারিদের

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বিভিন্ন খামারের কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। ফলে আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খামারিরা। মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যা অপূরণীয়। তারা বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও ও ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করায় এখন কিভাবে সেই টাকা শোধ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ঋণ আতঙ্কে অনেকের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

জানা যায়, উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে ৩ হাজার ৫১০টি মাছের খামার রয়েছে। তালিকাভুক্ত সবকটি খামারের প্রায় ৪ কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, ৬ থেকে ৭ কোটি টাকার মাছ বন্যায় ভেসে গেছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জুন স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে যায় জগন্নাথপুর পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের গ্রামের পর গ্রাম। পানিতে ভেসে যায় ছোট-বড় প্রায় ৪ হাজার পুকুরের মাছ। প্রথমদিকে পানি বাড়ছে দেখে মাছ চাষিরা জাল ও বাঁশ দিয়ে সীমানা উঁচু করার চেষ্টা করলেও এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। বন্যার ঢলে ভেসে যায় কয়েক কোটি টাকার মাছ।

এভাবে মাছ ভেসে যাওয়ায় মৎস্য চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। খামারিরা ব্যাংক ও এনজিওসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলেন। স্বপ্ন বুনেছিলেন তাদের উৎপাদিত মাছ বিক্রি করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাবেন এবং সব ঋণ শোধ হবে। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় ভেসে গেছে তাদের স্বপ্ন। বর্তমানে বন্যার পানি নেমে গেলেও এর ক্ষতচিহ্ন নিয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন মৎস্য চাষিরা। এর মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে ঝুলে আছে ঋণের বোঝা। তারা এখন বুঝে উঠতে পারছেন না কিভাবে এই ঋণ শোধ করবেন।

বাগময়না গ্রামের খামারি নাসিম মিয়া বলেন, ছোট-বড় ৬টি পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেছিলাম গত বছর। এবারের বন্যায় ভেসে গেছে ফিশারির সব মাছ। এতে ৬০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আমার।

ইসলামপুর গ্রামের বারিক মিয়া বলেন, গত ৩ বছর ধরে মাছগুলো বড় করেছিলাম। কিন্তু ভয়াবহ বন্যা সব মাছ নিয়ে গেছে। ঋণ নিয়ে পুকুরে মাছ চাষ করেছি। আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।

জগন্নাথপুর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান জানান, বন্যায় জগন্নাথপুর উপজেলায় ৩ হাজার ৫১০টি খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে ৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।