উন্নত বিশ্ব ও একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিকে বিবেচনায় নিয়ে একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট ২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে (ইন্যাগুরাল লিডারস সেশন) গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক দক্ষিণের (গ্লোবাল সাউথ) উন্নয়নের জন্য এগুলো সম্মিলিতভাবে সমাধান করা প্রয়োজন। মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই সম্মেলন বিশ্বজুড়ে তাদের সমকক্ষদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার এক অনন্য সুযোগ করে দেবে। বাংলাদেশ গ্লোবাল সাউথের একটি দেশ। ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ ধারণার আওতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য জি২০-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানাই।
টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রস্তাবে তিনি বলেন, প্রথমত মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত একটি নতুন দৃষ্টান্ত প্রয়োজন, যা এসডিজির সমান্তরালে সামগ্রিকভাবে বৈষম্যকে মোকাবিলা করবে। তৃতীয়ত স্বল্পোন্নত দেশ, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশসহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য বিশেষ অর্থায়নের প্রয়োজন, তাদের উত্তরণের সময় এটি পূরণ করতে হবে।
চতুর্থ প্রস্তাবে তিনি নারীসহ সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল ডিভাইডস’ সেতুবন্ধ রচনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনিয়োগ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা নিয়ে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর সমর্থন অত্যাবশ্যক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, পঞ্চমত সব মানুষেরই ভালোভাবে জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত। বৈশ্বিক সম্প্রদায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতের বিষয়টি যেন ভুলে না যান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাউথ-সাউথ ও ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করুন। এখানে অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত, থিংক-ট্যাংক ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রায় পাঁচ দশক আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘মহান অর্থনৈতিক উত্থান’-এর মুখে একটি ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য জরুরি বোধ তৈরির আহ্বান জানিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি২০ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বিষয়ে পরামর্শমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে জি২০ প্ল্যাটফরমকে আরও অর্থবহ করার জন্য তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি।
তিনি ‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট’ আহ্বান করার জন্য এবং ‘মানবকেন্দ্রিক উন্নয়ন’বিষয়ক উদ্বোধনী নেতাদের অধিবেশনে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বক্তব্যে বিশ্বব্যাপী দক্ষিণ দেশগুলোকে ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় অংশীদারিত্বের অধিকারী একটি ঐক্যবদ্ধ সত্তা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ভারত সবসময় সর্বজনীন ভবিষ্যৎ নির্ধারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। উদীয়মান বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে পুনর্নির্মাণ করতে তিনি বিশ্বব্যাপী দক্ষিণের দেশগুলোর প্রতিনিধিত্বকারীদেরও সমস্বরে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানান।
বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও আর্থিক ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস করতে, বৈষম্য দূর করতে, সুযোগ সম্প্রসারিত করতে, প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন জানাতে এবং অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী দক্ষিণ দেশগুলোকে রূপান্তরিত করার জন্য সহজ, পরিমাপযোগ্য ও টেকসই সমাধানের আহ্বান জানান।
এক্ষেত্রে চারটি কৌশল প্রস্তাব করেন মোদি। এগুলো হলো- একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভারসাম্যপূর্ণ আন্তর্জাতিক এজেন্ডা তৈরি করে বিশ্বব্যাপী দক্ষিণের দেশগুলোর অগ্রাধিকারের প্রতি সাড়া প্রদান; ‘সাধারণ কিন্তু ভিন্নধর্মী দায়িত্ব’ নীতিটি সব বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তার স্বীকৃতি প্রদান; সব জাতির সার্বভৌমত্ব, আইনের শাসন এবং মতভেদ ও বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রতি সম্মান জানানো এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তোলার জন্য সংস্কার করা।