মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ঝিমাই খাসিয়া পুঞ্জিতে ৭২টি খাসিয়া পরিবারকে উচ্ছেদ ও বন ধ্বংসের পাঁয়তারা বন্ধের দাবি জানিয়েছে দেশের ১৩টি সংগঠন।
রোববার (৫ মার্চ) এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনসমূহ এ দাবি জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঝিমাই খাসিয়া পুঞ্জির ৭২টি খাসিয়া পরিবারের প্রায় একশ বছর ধরে ৪০৬ একর ভূমিতে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছে। ঐতিহ্যগতভাবে এ ভূমিতে রয়েছে তাদের পূর্ব পুরুষদের সমাধি বা কবরস্থান, তিনটি ধর্মীয় গির্জা, খেলার মাঠ, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, খাসি মাতৃভাষা শিক্ষাকেন্দ্র ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া রয়েছে তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন পান জুমের জমি ও হাজার হাজার শতবর্ষী গাছ। খাসিয়া পুঞ্জির পাশেই কেদারপুর টি কোম্পানির মালিকানাধীন ঝিমাই চা বাগান। খাসিয়াদের ভূমি অধিকার, তাদের জীবনধারা ও অস্তিত্বের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে সরকার ঝিমাই মৌজার খাসিয়া পুঞ্জির ভূমিসহ আরও ৬৬১ একর ভূমি ৪০ বছরের জন্য ইজারা দিয়েছে। ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষ সরকারকে তথ্য গোপন করে এ লিজ নেয়। এতে চা বাগান কর্তৃপক্ষ ও খাসিয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এ ইজারাকে কেন্দ্র করে চা বাগান সম্প্রসারণের নামে খাসিয়াদের ভূমি দখলের চেষ্টা চলছে। এর আগে চা বাগান কর্তৃপক্ষ খাসিয়া জনগোষ্ঠীর চলাচলের প্রধান সড়কটি বন্ধ করে দিয়ে তাদের চলাচলে বাধা দেয়। চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করে আসছে বলে অভিযোগ খাসিয়া জনগোষ্ঠীর। সম্প্রতি চা বাগান কর্তৃপক্ষ দুই হাজার ৯৬টি গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে। এ অবস্থায় খাসিয়া পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ ও বন ধ্বংসের পাঁয়তারা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল, নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি জেড আই খান পান্না, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।
আইন ও শালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান লিটন, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলী তালাং, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন প্রমুখ।