এবারের ঈদের ছুটিতে দেশের সড়ক ও মহাসড়কে ৩১৯টি দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জনের প্রাণহানি ও ৭৭৪ জন আহত হয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এছাড়া সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৩৫৪টি দুর্ঘটনায় ৪৪০ জনের মৃত্যু ও আহত হয়েছেন ৭৯১ জন।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিগত ৭ বছরের ঈদুল আজহায় যাতায়াতের সঙ্গে তুলনায় এবারের ঈদে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি দুটোই সর্বোচ্চ।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ‘ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন ২০২২’ প্রকাশকালে এ তথ্য জানান।
যাত্রী কল্যাণের মহাসচিব বলেন, ‘এবার ঈদে মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। ঈদে রাজধানী ঢাকা থেকে ১ কোটি ২০ লাখ এবং এক জেলা থেকে অপর জেলায় প্রায় ৪ কোটি মানুষের যাতায়াত হয়েছে। এবার সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করায় গণপরিবহন সংকটের সুযোগ নিয়ে বাড়তি ভাড়া নৈরাজ্য হয়েছে।’
এসময় লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গত ৩ জুলাই থেকে ঈদযাত্রা শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে দেশের সড়ক ও মহাসড়কে ৩১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জন নিহত ও ৭৭৪ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছেন।’
এছাড়া নৌ-পথে ১০টি দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ১৫ জন আহত এবং ৩ জন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৩৫৪টি দুর্ঘটনায় ৪৪০ জন নিহত ও ৭৯১ জন আহত হয়েছেন।
১১৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত ও ৬৮ জন আহত হয়েছেন। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, নিহতের ৩২ দশমিক ৯১ শতাংশ। এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ১৫৭ জন চালক, ৮ জন পরিবহন শ্রমিক, ১০৬ জন পথচারী, ৬২ জন নারী, ৫১ জন শিশু, ৩৬ জন শিক্ষার্থী, ৬ জন সাংবাদিক, চিকিৎসক ৪ জন, ৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৬ জন শিক্ষক, ৬ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ১ জন প্রকৌশলীর পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছে, ৩ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ১ জন আনসার সদস্য, ৩৬ জন নারী, ৩৬ জন শিশু, ২৯ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন শিক্ষক, ১২৪ জন চালক, ৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮৬ জন পথচারী, ৩ জন সাংবাদিক, ৪ জন চিকিৎসক, ৩ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৩ দশমিক ২৮ শতাংশ ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ কার, মাইক্রো, জিগ, ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। নসিমন, করিমন, ট্রাক্টর, লেগুনা, মাহিন্দ্রা, ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ অটোরিকশা, ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ ব্যাটারী রিকশা, ইজিবাইক, ভ্যান, সাইকেল ও ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। এছাড়া সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে সংঘটিত হয়।
এসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুল নেওয়াজ, সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।