ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশের নারীদের দক্ষিণ এশিয়া জয়

নেপালের মাটিতেই নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। একইসাথে অর্জন করলো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্ব।

তার আগে ইতিহাস গড়ার হাতছানি নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ নেপাল। যাদের বিপক্ষে জয় অধরা হয়েই আছে। শঙ্কা তো ছিলই। কিন্তু যে দিনটা বাংলাদেশের, যে দিনটা কৃষ্ণা-শামসুন্নাহারের, সেদিন তো বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়বেই। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের হয়ে দুটি গোল করেছেন কৃষ্ণা রানি সরকার। আর ১টি গোল করেন শামসুন্নাহার। নেপালের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন আনিতা বাসেত।

দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব নারী দলে এবারই প্রথম। এর আগে ২০১৬ সালে ভারতের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে হেরেছিল। এবার কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সিনিয়র ফুটবলে কখনো ভারত ও নেপালকে না হারানো বাংলাদেশ এবার তাদের হারিয়েছে। গ্রুপ পর্বে হারিয়েছে ভারতকে আর ফাইনালে নেপালকে।

বাংলাদেশের ফাইনালের জয়ের নায়ক কৃষ্ণা রাণী সরকার। তার জোড়া গোলে বাংলাদেশ নেপালকে বধ করে।

ফাইনালের শুরু থেকেই খেলা নিয়ন্ত্রণ করেছে বাংলাদেশই। ১৪ মিনিটে শামসুন্নাহার জুনিয়র দুর্দান্ত গোল করেন। মনিকা চাকমার ক্রস থেকে শামসুন্নাহার জুনিয়র কোনাকুনি প্লেসিংকে করে বাংলাদেশকে লিড এনে দেন।

এক গোলে পিছিয়ে পড়ে পুরো দশরথ স্তব্ধ হয়ে পড়ে। উজ্জীবিত নেপাল সমর্থকরা কিছুক্ষণের জন্য নিশ্চুপ বনে যান। নেপাল ফুটবলাররা ম্যাচে সমতা আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। বিশেষ করে ৩০-৪০ মিনিট তারা বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ করে। বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা দু’টি দারুণ সেভ করেছেন।

নেপালের জালে বাংলাদেশ দ্বিতীয় গোল জড়ায় ৪২ মিনিটে। মিডফিল্ড থেকে বাড়ানো এক থ্রু পান কৃষ্ণা রাণী সরকার। বক্সের এক প্রান্তে আনমার্কড থাকা কৃষ্ণা আগুয়ান গোলরক্ষককে পরাস্ত করলে বাংলাদেশের ডাগআউট আবার উৎসবে মাতে।

দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিক নেপাল অত্যন্ত চাপে রাখে বাংলাদেশকে। সেই চাপের ধারাবাহিকতায় ৭০ মিনিটে আনিতা বেসন্ত নেপালকে গোল করে ম্যাচে ফেরান। সংঘবদ্ধ এক আক্রমণে বক্সের মধ্যে প্রবেশ করে কোনাকুনি শটে রুপনা চাকমাকে পরাস্ত করেন।

নেপাল আরও এক গোল দিয়ে সমতা আনার চেষ্টা করছিল। সেই মুহূর্তে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রাণী সরকার গোল করে বাংলাদেশকে জয়ের সুবাতাস দেন। ৭৭ মিনিটে মিডফিল্ড থেকে পাওয়া থ্রুতে তিনি আগুয়ান গোলরক্ষককে দারুণভাবে পরাস্ত করেন। কৃষ্ণার এই গোলের পর কোচ ছোটনের চিন্তার ভাঁজ কিছুটা কমে।

ম্যাচের বাকি সময় নেপাল গোলের জন্য চেষ্টা করে। বাংলাদেশ রক্ষণে দারুণভাবে সময় কাটায়। এই ম্যাচে কৃষ্ণা জোড়া গোল করেছে এর পাশাপাশি গোলরক্ষক রুপনা চাকমাও দারুণ খেলেছেন। পুরো ম্যাচে তিনি দুর্দান্ত কয়েকটি সেভ করেছেন। না হলে নেপালও আরো একটি গোল পেতেই পারত।

ইতিহাস গড়ার হাতছানি নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ নেপাল। যাদের বিপক্ষে জয় অধরা হয়েই আছে। শঙ্কা তো ছিলই। কিন্তু যে দিনটা বাংলাদেশের, যে দিনটা কৃষ্ণা-শামসুন্নাহারের, সেদিন তো বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়বেই। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।

সোমবার ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ জিতল নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। অর্জন করল দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্ব।