ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র কেমন প্রভাব ফেলবে?

ইউক্রেনে যুদ্ধে ইরান মস্কোকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে যাচ্ছে বলে পশ্চিমারা অভিযোগ করছে। তেহরানের এমন সহায়তা যুদ্ধের ময়দানে রুশ সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। ফলে ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষাকে কিছুটা দুর্বল করে তোলার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মিত্র রাশিয়াকে সহায়তায় ইতোমধ্যে কামিকাজে বা শাহেদ-১৩৬ নামে পরিচিত ড্রোন সরবরাহ করেছে ইরান। যা দিয়ে গত মাসে একাধিক ড্রোন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ কয়েকটি শহরের বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালায় রুশ বাহিনী, এতে নিহত হন কয়েকজন। কিয়েভের আকাশে ইরানের তৈরি ড্রোনের প্রবেশে উদ্বিগ্ন জেলেনস্কির সরকার।

এর মধ্যেই রুশ বাহিনীকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে যাচ্ছে ইরান, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কিয়েভ। মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়াকে অতিরিক্ত এক হাজার অস্ত্র দিতে যাচ্ছে তেহরান। এসবের মধ্যে উন্নত প্রযুক্তির নির্ভুল আঘাত হানা এমন ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

রুশ হামলা ঠেকাতে ইউক্রেনকে সহায়তায় পশ্চিমা মিত্রদের কাছে আরও উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র চেয়েছে ইউক্রেন। দেশটির বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহানাত বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই। আমাদের বিমানবিরোধী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে তেমন প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নেই।

কী ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাতে পারে ইরান?

ইরানের অস্ত্র পর্যবেক্ষণকারী একাধিক মার্কিন কর্মকর্তা দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ইরানি কর্মকর্তাদের মস্কোয় পাঠানো হয়েছিল এবং অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণের জন্য চুক্তি করা হয় ১৮ সেপ্টেম্বর। পোস্ট এবং রয়টার্স গত মাসে জানায়, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যবহারে মস্কোকে যে অস্ত্র সরবরাহ করতে যাচ্ছে এতে ফতেহ-১১০ এবং জোলফাঘার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।

রাশিয়া এমন সময় তার মিত্রদের দিকে সামরিক সহায়তার জন্য হাত বাড়িয়েছে যখন ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে রুশ যোদ্ধারা চরম বিপর্যয়ে রয়েছে। ইউক্রেন মার্কিন সরবরাহকৃত অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থাটির নাম হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম বা হিমার্স। এটি মাঝারি পাল্লার মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম বা এমআলআরএস। এটি ভ্রাম্যমাণ একটি ইউনিট যা একই সঙ্গে একাধিক নির্ভুল-নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করতে পারে। এর মাধ্যমে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক স্থপনায় ব্যাপকভাবে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। ফলে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে রুশ বাহিনী। প্রচুর গোলাবারুদ এবং সামরিক সরঞ্জামও ধ্বংস করা হয়েছে।

যদিও হিমার্স ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জের তুলায় অনেক কম। মিলিটারি টুডের তথ্য অনুযায়ী, ফতেহ -১১০ প্রায় ২০০ মাইল পর্যন্ত আঘাত হানার সক্ষমতা রাখে। ঘণ্টায় ৩ হাজার ৮০০ মাইল গতিবেগে চলতে পারে।

অন্যদিকে মিসাইল ডিফেন্স অ্যাডভোকেসি বলছে, জোলফাঘর ক্ষেপণাস্ত্রটি ফতেহ-১১০-এর বিকল্প। এটি নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে পারে। ইরানের এসব অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়াকে কতটুকু ঘুরে দাঁড়ানো অথবা শক্তি যোগাবে সেটিই এখন প্রশ্ন।

মিত্র ইরানের কাছ থেকে এমন সহায়তার মধ্যেই ইউক্রেনকে ৮টি ন্যাশনাল অ্যাডভান্সড সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম (নাসামস) পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে দুটি অল্প সময়ের মধ্যেই মোতায়েন করা হবে। তবে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়াকে ইউক্রেন আগ্রাসনের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখ্যযোগ্য উৎসাহ দেবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে নিউজউইককে কিংস কলেজ লন্ডন (কেসিএল) প্রতিরক্ষা স্টাডিজ বিভাগের গবেষণা সহকারী মেরিনা মিরন বলেন, ফতেহ-১১০ তুলনামূলক সস্তা এবং যেকোনও জায়গায় থেকে উৎক্ষেপণের সক্ষমতা রাখে। আর এটা বড় ধরনের একটা সুবিধা।

রাশিয়াকে কেন সহায়তা করছে ইরান?

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু থেকে রাশিয়াকে ড্রোনসহ কোনও ধরনের সামরিক সহায়তা দেয়নি বলে অস্বীকার করেছে তেহরান। কিন্তু এ যুদ্ধে রাশিয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে আবির্ভূত হয়েছে এই দেশটি। আর চলমান যুদ্ধে মস্কোকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে পারলে অর্থনৈতিক ও সামিরকভাবে বেশ লাভবানই হবে ইরান।

এ ক্ষেত্রে মেরিনা মিরন আরও বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যুদ্ধের ময়দানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো ইরানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাস্তব যুদ্ধে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিশ্ব পরিস্থিতিতে পরীক্ষা চালাতে চায় দেশটি। কারণ, প্রতিবেশী ইরাক নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ইরান। কারণ তার শত্রু ইসরায়েলের আরেকটি লক্ষ্য ইরাক।

সূত্র: নিউজউইক