সিলেট সিটি করপোরেশনের বহুল আলোচিত কর শাখার দুর্নীতি ফের আলোচনায়। অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতির পরও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো রকম কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। উল্টো মাসিক সাধারণ সভার রেজ্যুলেশন পাল্টে তদন্তে প্রমাণিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে নতুন করে পদায়নের চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের সেপ্টেম্বরে। সিসিকের কর ধার্য্য শাখার কিছু অনিয়মের খোঁজ পেয়ে তৎকালীন শাখা প্রধান চন্দন দাশকে ওএসডি করে সিসিক প্রশাসন। একই সাথে অনয়িম তদন্তে সিসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করা হয় ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। তবে অভিযুক্ত চন্দন দাশের প্রভাবের কাছে শুরুতেই হোঁচট খায় তদন্ত কমিটি। তার নানামূখী চাপ প্রয়োগে কমিটির দুই সদস্যকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হয় সিসিক প্রশাসন। এরপর চার সদস্যের তদন্ত কমিটিও ৭ দিনের জায়গায় সময় নেয় চারমাস।
অবশেষে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি জমা হয় তদন্ত প্রতিবেদন। এতে কর ধার্য্য শাখার তিন কর্মকর্তা- কর ধার্য্য শাখা প্রধান চন্দন দাস, সহকারী এসেসর শেখর দেবনাথ ও সহকারী এসেসর আহমদুজ্জামান কর্তৃক অনিয়মে অন্তত ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব ঘাটতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়। তদন্ত রিপোর্টে অস্থায়ী কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত, স্থায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চাকরি বিধি ২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করা হয়।
তবে রিপোর্ট জমার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দীর্ঘদিন গড়িমসি করে সিসিক প্রশাসন। এরপর গত মে মাসের ১০ তারিখে সিসিকের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুল হকের সুপারিশে ‘মানবিক দিক বিবেচনায়’ দায়মুক্তি দেয়া হয় তিনজনকেই। উল্টো প্রধান অভিযুক্ত চন্দন দাশকে ওএসডি থেকে সরিয়ে বাজার তত্ত্বাবধায়ক পদে পদায়ন করা হয়। তবে কাউন্সিলরদের তোপের মুখে গত ৭ আগস্ট সিসিকের মাসিক সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে চন্দন দাশকে ‘জনগুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব না দেওয়ার’ সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
আরও পড়ুন : সিলেটের আম্বরখানায় দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো পুলিশ সদস্যের
তবে সম্প্রতি সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে চন্দন দাশকে সিসিকের রাজস্ব কর্মকর্তার মতো পদে পদোন্নতি দিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন কয়েকজন। এমনকি সিসিক মেয়র আরিফুল হকের মেয়াদ শেষের দিকে হওয়ায় দ্রুত সোমবার (৩০ অক্টোবর) একটি সাধারণ সভার আয়োজনও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিসিকের একাধিক সূত্র। সভায় চন্দন দাশের আগের দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে পদোন্নতি দেয়ার জন্য প্রস্তাবনা আনা হতে পারে, আর এতে বর্তমান মেয়রের সায় আছে বলেও জানা যায়।
এসব ব্যাপারে জানতে মেয়র আরিফুল হকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আর সিসিকের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফুর রহমান এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, সিলেট নগরীর দর্শন দেউড়ি এলাকায় আর্কাডিয়া নামে একটি বহুতল ভবনের করধার্য্য করতে গিয়ে ভুয়া আবেদন, গ্রাহকের জাল স্বাক্ষর, ধার্য্যকৃত টাকার পরিমাণ পরিবর্তন করে কর আদায় শাখাকে চিঠি প্রদান, ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ১১০ টি হোল্ডিং এসেসমেন্ট রেজিস্ট্রারে না তোলা, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থ বছর পর্যন্ত অন্তত ১৮৩১ টি হোল্ডিং কম্পিউটারে এন্ট্রি না দেয়া, সব মিলিয়ে ১৯৪১ হোল্ডিং এ অনিয়মের মাধ্যমে সিসিকের অন্তত ২৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার রাজস্ব ক্ষতিতে জড়িত ছিলেন অভিযুক্ত তিনজন। যা পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি কর্তৃক প্রমাণিত হয়।