বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বকেয়া আদায়ে আগে নোটিশ দিন। এরপরও আদায় না হলে লাইন কেটে দিন। আমার কাছেও বিল বকেয়া থাকলে একই ব্যবস্থা নিন। লাইন কেটে দিন। সরকারি-বেসরকারি অফিসের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে আছে। বিল আদায় করতে হবে।
বুধবার (১ জুন) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগে নেসকোর আওতাধীন এলাকায় স্মার্ট মিটার স্থাপন প্রকল্প প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন সরকার প্রধান।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা এবং একনেকের অন্যান্য বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। একনেক সভাপতি হিসেবে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দুই বছরেরও বেশি সময় পর বুধবার একনেক বৈঠকে সরাসরি উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী। দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এতদিন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি একনেক বৈঠকে সংযুক্ত থাকতেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে ৯টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আজ আনুমানিক ২ হাজার ৬৬৫ দশমিক ২১ কোটি টাকার মোট ৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত ৯টি প্রকল্পের মধ্যে ৭টি নতুন, বাকিগুলো সংশোধিত প্রকল্প। ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কিছু নির্দেশনার কথা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই প্রি-পেমেন্ট মিটার প্রচেষ্টা জোরদার হলে, সিস্টেম লস উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পারে।
মান্নান বলেন, যাদের বিদ্যুৎ বিল বড় ধরনের বকেয়া রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী সরকারি-বেসরকারি যেই হোক না কেন, বিদ্যুৎ বিল যে বা যেই প্রতিষ্ঠান বকেয়া রাখবে-তাদের বিরুদ্ধেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। এমনটি নোটিশ প্রদানের পরও যদি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করে তবে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ কর্তনেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মান্নান আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী ধাপে ধাপে দেশের সবগুলো স্থল-বন্দরকে আধুনিকায়ন করতে নৌ-মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রায় ২৪টি স্থল-বন্দর রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সবগুলো স্থল-বন্দরে আধুনিক সরঞ্জামাদি ও পদ্ধতি স্থাপন করা হবে, যাতে সরকার আরো ভাল সেবা প্রদান করতে পারে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকারের বর্তমান পরিকল্পনা হচ্ছে- নতুন রাস্তা নির্মাণের পরিবর্তে বিদ্যমান সড়কগুলোর সংস্কার ও সেগুলো উন্নয়ন করা।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী কোন অবকাঠামো নির্মাণের আগে পরিবেশ, নদী, খাল ও বনাঞ্চল সংরক্ষণের দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব তহবিলে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেই অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীর কাছ থেকে তিনি পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছেন বলেই আওয়ামী লীগ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এমন একটি বিরাট অবকাঠামো নির্মাণ করতে পেরেছে।
আগামী ১৫ থেকে ২১ জুন শুরু হতে যাওয়া দেশের ষষ্ঠ আদম শুমারী (পপুলেশন ও হাউজিং সেন্সাস) সফল করার জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী দেশবাসীর সহায়তা কামনা করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ছাড়াও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।