সময়ের চাহিদায় প্রযুক্তিনির্ভর মাধ্যমগুলো এসেছে। যেমন ইউটিউব, ফেসবুক কিংবা বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। এসব মাধ্যমে নিয়মিত কনটেন্ট মুক্তি পাচ্ছে, সেগুলো গোগ্রাসে গিলছে দর্শক। ভিউ বিবেচনায় নির্ধারিত হচ্ছে জনপ্রিয়তা, বাজেট এবং শিল্পী বাছাই। নাট্যাঙ্গনের জন্য এগুলো কতটা ক্ষতিকর, তা নিয়ে আলোচনায় বসেছেন শিল্পীরা।
শনিবার (৫ নভেম্বর) শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘সাম্প্রতিক কাহিনিচিত্র ও অভিনয় বাস্তবতা’ শীর্ষক এ সেমিনার। অভিনয়শিল্পী সংঘের আয়োজনে এই সেমিনারে অংশ নিয়েছেন দেশের গুণী ও তারকা শিল্পীরা।
এতে উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশিদ, জাহিদ হাসান, তৌকীর আহমেদ, তারিন, জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, বৃন্দাবন দাস, সালাউদ্দিন লাভলু, সাজু খাদেম, অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবীব নাসিমসহ অনেকেই।
আলোচনায় আক্ষেপের সুর পাওয়া গেলো চঞ্চল চৌধুরীর কণ্ঠে। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মুখের মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে গেছে। আর পিঠের মেরুদণ্ডের কথা বাদই দিলাম। আমরা আসলে যা কিছু বলি তা করতে পারি না। তাই মনে হয়, বলে নয়, করে দেখাতে হবে। তা না হলে টেলিভিশন নাটক ও ছোটপর্দার শিল্পীরা ধ্বংস হয়ে যাবে।’
টিভি নাটকের অধঃপতন বোঝাতে চঞ্চল আরও বলেন, ‘যেদিন থেকে টেলিভিশন নাটক কন্ট্রাক্টে চলে গেছে, সেদিন থেকেই এই ইন্ডাস্ট্রি শেষ হয়ে গেছে। মাছের মতো দামাদামি করে এখন নাটক নির্মাণ করা হয়। এর কারণও আছে অনেক, যেগুলো আমরা জানি কিন্তু বলার সাহস রাখি না। তাই আমাদের নিজেদের আরও শক্ত হতে হবে।’
অভিনেত্রী তারিন রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভিউ-বাণিজ্য ইস্যুতে। তার ভাষ্য, ‘এখন সবকিছুই ভিউয়ের ওপর নির্ধারণ করা হয়। আর সবচেয়ে বড় শিল্পী এখন ভিউয়াররা। তারা দেখলেই নাটক হিট হয়। যার ফলে টেলিভিশন কোম্পানিগুলো ভিউয়ারদের কথা মাথায় রেখে শিল্পী ও গল্প নির্ধারণ করেন। তাই আমি মনে করি এখন শিল্পীদের থেকেও বড় শিল্পী ইউটিউব-ফেসবুকের দর্শকরা।’
এসব সংকটের পেছনে শিল্পীদেরও দায় আছে বলে মনে করেন তিনি। তাই শিল্পীদের নিজের অধিকার আদায়ে সচেতন ও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারিন।
বর্তমানের মতো নাজুক পরিস্থিতি নাট্যাঙ্গনে আগে কখনও দেখেননি বলে মনে করেন জাহিদ হাসান। তিনি বলেছেন, ‘এখন আমরা নাটকের শুটিং করি এক দিনে। কারণ বাজেট কম, সময় কম। সবার আগে জমা দিতে হবে তাই তাড়াহুড়ো। এই মানসিকতা আমাদের নাটক ও টেলিভিশন শিল্পকে শেষ করে দিয়েছে। আমি এতোদিন ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি কিন্তু বর্তমানের মতো এমন পরিস্থিতিতে কখনও পড়িনি। এর কারণ আমাদের অতীতকে আমরা ভুলে গিয়েছি। আমার মনে হয় এই ইন্ডাস্ট্রি বাঁচিয়ে রাখতে নিজেদের আগে শোধরাতে হবে।’
সবার শেষে আহসান হাবীব নাসিমের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সেমিনার সমাপ্ত হয়।