এ এক বিস্ময়! ধানের একটি চারা এক রোপনে ফলন দেবে মোট পাঁচ বার। বালাদেশের বিশিষ্ট জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত এক রোপনে পাঁচ বার ফলনের এই ধানের নাম দিয়েছেন পঞ্চব্রীহি ধান।
নিজের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নে করছেন পঞ্চব্রীহি ধানের আবাদ। আর এলাকার বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রেখেছেন তাঁর এই গবেষণালব্ধ প্রদর্শনীটি।
বুধবার (২৩ আগস্ট) সকাল ১১ টায় কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর গ্রামে টিলাগাঁও আজিজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় ও কানিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের মোট ৪০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষা সফরে এসে ঘুরে দেখেন ড. আবেদ চৌধুরীর পঞ্চব্রীহি ধানের মাঠ।
শিক্ষা সফরে কানিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সিনিয়র শিক্ষক, টিলাগাঁও আজিজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকসহ উই আর ফ্রেন্ডস ফর হিউম্যান’র সমন্বয়ক জগদীশ চন্দ্র দত্ত ও পিসি মো. সাইফ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিন এক রোপনে পাঁচ ফলন দেখে টিলাগাঁও আজিজুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার মাহবুব রিহাদ বলেন, বর্তমান বিশ্বে বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ একটি বিরাট হুমকি। আমরা যদি পতিত ও কৃষি জমিতে সারা বছরের জন্য পঞ্চব্রীহি ধান লাগাতে পারি, তাহলে তা বায়ুমন্ডলের গ্রীণ হাউস গ্যাস শোষণ করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ মোকাবেলায় বিরাটভাবে সহযোগিতা করবে।
টিলাগাও আজিজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মর আলী ও শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, “আমি প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই আমাদের এলাকার কৃতি সন্তান ড. আবেদ চৌধুরীকে। উনার এই উদ্ভাবন আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা স্বপ্ন দেখি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। এখানে সবাই বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এসেছেন। আজকের এই শিক্ষা সফর শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে বিজ্ঞান শেখায় আগ্রহী করে তুলবে। সর্বোপরি আমি আজকের এই শিক্ষাসফরের আয়োজকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাই।
আইভিইএমআরভিএম প্রকল্প সুপারভাইজার তাহমিদ আনাম চৌধুরী বলেন, আপনারা সবাই এই এলাকার বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। আপনাদের এই এলাকায় আমরা নতুন জাতের একাধিকবার ফলনশীল ধান নিয়ে কাজ করছি। আপনারা প্রতিনিয়ত এই কৃষি জমির দিকে লক্ষ্য করলে বিজ্ঞানের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারবেন। এটা আপনাদের বিজ্ঞানকে জানা ও শেখার আগ্রহকে আরো ত্বরান্বিত করবে। সবশেষ, আপনারা সবাই বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনবেন-সেই কামনা করি।”
পঞ্চব্রীহি মাঠের ধান পরিদর্শন শেষে গাছতলায় শিক্ষার্থীদের সামনে সমাপনি বক্তব্যে কানিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফজল উদ্দিন বলেন, আমরা আজকে পঞ্চব্রীহি ধান দেখলাম। এখন আমাদের বেশীরভাগ পরিবার কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত নয়। কিন্তু আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আমরা যদি বাংলাদেশকে কৃষির মাধ্যমে এগিয়ে নিতে চাই, তাহলে আমাদের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। এখনও আমাদের দেশে অন্যান্য দেশের তুলনায় যে প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে, তা অন্যান্য দেশে নাই। তাই আমরা যদি এই প্রাকৃতিক পরিবেশ ও কৃত্রিম সাপোর্ট, এই দুইয়ের সমন্বয়ে এগিয়ে যেতে পারি এবং ড. আবেদ চৌধুরীর মত সফল মানুষ যারা, তাদের সহযোগিতা যদি পাই, তাহলে এই দেশ একদিন কৃষির মাধ্যমে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবে।
বিডিওএসএন এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরীক্ষামূলকভাবে উক্ত এলাকায় এ পর্যন্ত বোরো মৌসুমের একবার ফসল উত্তোলন করা হয়েছে এবং একই চারা হতে এ বছরের দ্বিতীয়বারের মত ফসল উৎপাদন চলছে।
কৃষিখাতের উদ্ভাবনে বিডিওএসএন প্রথমবারের মত কোন গবেষণাভিত্তিক এগ্রো প্রজেক্ট পরিচালনায় সহযোগিতা করছে যেখানে পঞ্চব্রীহি জাতের ধানের মাধ্যমে কম খরচে খাদ্যচাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখতে পারে।