আদালতের নির্দেশ অমান্য করে, গণভবনের নির্দেশের অপপ্রচার চালিয়ে নিজের চাচাতো ভাইদের ২৪ শতক জমি দখল করে নিয়েছেন সিলেট সদর উপজেলার জামায়াত নেতা সামসুল ইসলাম। শুধু জমি দখলই নয়, বরং মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে হয়রাণি ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন ওই জামায়াত নেতা।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন এমন অভিযোগ করেছেন সিলেট সদরের খাদিমপাড়া ইউনিয়নের দেওয়ানেরচক গ্রামের মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে মো. ফখর উদ্দিন।
লিখিত বক্তব্যে ফখর উদ্দিন বলেন, তাঁর বাবার চাচাতো ভাই একই গ্রামের কুটি মিয়ার ছেলে উমেদ আলী। তার বড়ছেলে জামায়াত নেতা সামসুল ইসলাম। তিনি তার দুই ভগ্নিপতি একই গ্রামের মোফাজ্জল আলীর ছেলে মাসুদ আহমদ ও মেজরটিলার মুকিরপাড়ার মৃত বশির উদ্দিনের ছেলে নূর উদ্দিন ও তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রসাীদের নিয়ে তাদের ২৪ শতক ভূমি জোর করে দখল করে নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে আটগাঁও মৌজার জেএল নং ৬৭, ১২১০নং খতিয়ানের এসএ দাগ নং ৪৯৭৫- এর ১২ শতক জমি নিয়ে ২০০২ সাল থেকে মামলা চলছে। উচ্চআদালতের স্থিতাবস্তার নির্দেশ অমান্য করে তারা এই জমিসহ একই মৌজার একই জেএল নম্বরের ১১৮৫ খতিয়ানের ৪৯৭৭ এসএ দাগের সাড়ে ৭ শতক এবং ৪৯৫৯ দাগের আরও সাড়ে ৩ শতক ভূমি দখল করে ফেলেছেন। ৪৯৭৫নং দাগের ১২ শতক জমি নিয়ে উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্তা নির্দেশ ছিল (নম্বর ৭৪৭/২০২২)।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, উমেদ আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম যুক্তরাজ্য ও কামরুল ইসলাম ইতালি প্রবাসী। তাদের প্রচুর টাকা থাকায় ভুয়া দলিল সৃষ্টি করে তার বড়ছেলে জামায়াত নেতা সামসুল দীর্ঘদিন থেকে আমাদের জমি গ্রাস করতে হয়রানি হুমকি ধমকি ও মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমাদের জমিতে পাকার খুঁটি বসাতে শুরু করেন।
এ ব্যাপারে শাহপরাণ থানায় আমি একটি সাধারণ ডায়রি করি ( নং ১৪১২/ ২৫/০৯/২২)। ২৬ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করি (নং ৫৯/২০২২)। এই মামলার প্রেক্ষিতে আদালত স্থিতাবস্তা জারি করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরাণ থানার এসআই মো. সাইফুল ইসলাম ২ নভেম্বর পর্যন্ত ১৪৫ ধারা অনুযায়ী উভয়পক্ষকে স্বস্ব অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেন। সেদিন উভয়পক্ষ কাগজপত্র নিয়ে আদালতে হাজির হবেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টি সমাধান করবেন।
এ অবস্থায় সামসুল মিথ্যার আশ্রয় নেন এবং তার ভগ্নিপতি মাসুদকে বাদী করে আমি ও আমার ভাগ্না শামীমের বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মামলা দেন। অবশ্য মামলায় গত ১৭ অক্টোবর আমরা জামিন পাই। কিন্তু ওই দিনই তারা ৫০/৬০ জন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে আমাদের জমি দখল করতে শুরু করেন। তারা পাকা খুঁটি বসাতে শুরু করলে আমরা থানায় ছুটে যাই। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইফুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন অনেক দেরিতে। ইতিপূর্বে সন্ত্রাসীরা সটকে পড়ে। তারা ১৮ ও ১৯ অক্টোবরও তাদের দখলবাজী চালিয়ে যায়। আমি ১৯ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। ২০ অক্টোবর সকালে আমি বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের উপর হামলা চালায়। আত্মরক্ষার্থে আমরা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে আমার পক্ষের কয়েকজন আহত হন। পরে তারা থানায় আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে পুলিশ আমার কাজের ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ১৪৫ ধারায় আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশ আমাদের সহযোগীতা করলে সামসুল ও তার লোকজন জমি দখল করতে পারতেন না। সামসুলের ভগ্নিপতি মাসুদ হুমকি দেয় যে গণভবনের নির্দেশে তারা এই জমি দখল নিচ্ছে। এমনকি শাহপরাণ থানার ওসির কাছে গেলে তিনিও মাসুদের ভাষায় কথা বলেছেন। আমাদের জানিয়েছেন, কিছু করার নেই। গণভবনের নির্দেশ।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, জামায়াত নেতা সামসুলের পক্ষে গণভবনের নির্দেশ থাকবে- এটাও কি আমরা বিশ্বাস করব? বরং আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য তারা এসব কথা বলে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের হত্যার হুমকিও দিচ্ছে।
তিনি তাদের সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনসহ প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সিলেটের পুলিশ কমিশনারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।