আজ ৯ ডিসেম্বর: জগন্নাথপুর মুক্ত দিবস

আজ ৯ ডিসেম্বর, জগন্নাথপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশকে মুক্ত করেছিলো বাংলার দামাল ছেলেরা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে জগন্নাথপুরের দামাল ছেলেরা ছাত্র, যুবক, শিক্ষক, কৃষক, আইনজীবী শত্রু মুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের এই দিনে জগন্নাথপুর থানা শত্রুমুক্ত হয়েছিল।

স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের বর্বরতম দুটি ঘটনাজগন্নাথপুরের শ্রীরামিসি ও রানীগঞ্জ এলাকায় সংগঠিত গণহত্যা। একাত্তরের ৩১ আগস্ট শ্রীরামিসি ও ১ সেপ্টেম্বর রাণীগঞ্জ বাজারে পাক হানাদাররা চালায় বর্বর হত্যাযজ্ঞ। শত শত মানুষকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। সেই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড আজও এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে উঠে। শ্রীরামিসি ও রানীগঞ্জ গণহত্যার পর ৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর ভোরে এসে জগন্নাথপুর পৌঁছায় রাজাকার ও পাক হানাদার বাহিনী।

সেখানে অবস্থানকালে জগন্নাথপুর পাক-হানাদার বাহিনীর মূল ঘাটি হিসিবে চিহ্নিত জগন্নাথপুর থানাতে আক্রমনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে মুক্তিসেনারা। এ সময় মুক্তিবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরাও যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। জগন্নাথপুর বাজারের ব্যারিষ্টার আব্দুল মতিন মিয়ার বাড়ির দক্ষিণ পাশে যুদ্ধের জন্য চুড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করলে পাক-হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিবাহিনীকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা পাক-হানাদার বাহিনী শেষ পর্যন্ত পিছু হটে।
মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখী আক্রমণের খবর পেয়ে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী সড়ক ও হাওরপথে পালিয়ে যায়। জগন্নাথপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর পালানোর পথ রেখে বালাট সাব-সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জেকে শত্রুমুক্ত করতে উদ্যোগ নেন।

পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জগন্নাথপুরে অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত ও যৌথ আক্রমণের খবরে ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী জগন্নাথপুর ছেড়ে পালাতে শুরু করে।

টানা ৫ দিনের যুদ্ধের মধ্যদিয়ে ৯ ডিসেম্বর জগন্নাথপুর থানাকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করে বাংলার বীর সেনানীরা। পাকসেনারা সেদিন মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। জগন্নাথপুর থানায় প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার মরহুম মির্জা আব্দুল মতিন।

উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি অভিযানে জগন্নাথপুর শত্রুমুক্ত হওয়ায় স্বাধীনতার আকাঙ্খায় দিন অতিবাহিত করা জনতা রাস্তায় নেমে এসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগত জানান।

দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ থাকার পর হাজার হাজার নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমে এসে মুক্তির উল্লাসে মেতে ওঠেন। এভাবেই শত্রুমুক্ত হয়।